বুধবার, ২ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

ডিজিটালাইজেশনে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বিচার বিভাগ

সিলেটের ২০টি আদালতে আজ শুভযাত্রা

আহমেদ আল আমীন ও তুহিন হাওলাদার

ডিজিটালাইজেশনের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ। প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো সাক্ষ্য আইনে বিচারকদের হাতে লেখা সাক্ষ্য গ্রহণের ঘটনা আজ থেকে অতীত। সিলেটের ২০টি আদালতে ডিজিটাল এভিডেন্স রেকর্ডিং চালুর মধ্য দিয়ে এ দিন নবযুগে পা রাখবে বিচার বিভাগ। আজ এই শুভ ঘটনার উদ্বোধন করবেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সুপ্রিমকোর্টের সহযোগিতায় জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে (ইউএনডিপি) জুডিশিয়াল স্ট্রেনথেনিং প্রজেক্টের (জাস্ট) আওতায় সিলেটের ২০টি আদালত কক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে আধুনিক এ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যান্য আদালতেও এ প্রকল্প চালু হবে বলে জানিয়েছেন সূত্র।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রগুলো জানান, মামলায় অভিযোগ গঠনের পর বিচারিক আদালতে প্রায়ই শুরু হয় তুঘলকি কাণ্ড! অভিযোগ প্রমাণের জন্য বাদীপক্ষ বা প্রসিকিউশনকে সাক্ষী হাজির করতে হয় আদালতে। সেই সাক্ষী কখনো বুঝে, কখনোবা না বুঝে যা বলেন, তা বিচারক হুবহু লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। কখনো কখনো সাক্ষী প্রকৃতপক্ষে কী বলছেন সে বিষয়টি নির্ধারণ করতে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের মধ্যে আদালত কক্ষেই ধুন্ধুমার কাণ্ড বেধে যায়। এক পক্ষ বলেন, ‘স্যার, সাক্ষী এটি বলেছেন। এটি লিখেন।’ অন্য পক্ষ বলেন, ‘সাক্ষী এটি বলেননি। এটি কিছুতেই লেখা যাবে না।’ দুই পক্ষের আইনজীবীর এই হট্টগোলের সময় বিচারককে ঠাণ্ডা মাথায় আবার ভাবতে হয়, সাক্ষী আসলে কী বলেছেন। ভেবেচিন্তে তিনি যে সিদ্ধান্তে উপনীত হন, সেটিই লিপিবদ্ধ করেন। ঘটনা আসলে কী ঘটেছিল—ক্রিকেটের মাঠে থার্ড আম্পায়ারের মতো ভিডিও ফুটেজ দেখে নির্ধারণ করার উপায় বিচারকের এত দিন ছিল না। এতে ক্ষতির আশঙ্কায় থাকত মামলার পক্ষগুলো। ডিজিটাল এভিডেন্স রেকর্ডিংয়ে সেই অসুবিধা দূর হবে। এখন থেকে সাক্ষী যা বলবেন, তার অডিও রেকর্ড হবে আদালতে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সমস্যার কথা মাথায় রেখে এক ঘণ্টা ব্যাকআপ রাখার মতো যন্ত্রপাতি থাকবে। এ প্রক্রিয়ায় সাক্ষী যা বলবেন, তা একজন স্টেনোগ্রাফার টাইপ করবেন। স্টেনো যা টাইপ করবেন, তা বিচারকসহ মামলার সব পক্ষ মনিটরে দেখতে পাবেন। কারও কোনো আপত্তি থাকলে তা বিচারককে জানাতে হবে। লেখাটি কী হবে, এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন স্বয়ং বিচারক। এভাবে সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ চূড়ান্ত হলে তাতে সাক্ষী ও বিচারক স্বাক্ষর করবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি অডিও রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে রেকর্ডের পর সফটওয়্যারে সংরক্ষণ করে রাখা হবে। রেকর্ডিং সফটওয়্যারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে বিচারকের হাতে। এ ছাড়া এই প্রক্রিয়ায় রেকর্ড করে রাখা হবে আলামতসমূহের ছবিও। এখন ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলায় বিচার প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই সাক্ষ্য হাতে লিখে লিপিবদ্ধ করেন বিচারকরা। দিনের পর দিন এভাবে তারা সাক্ষ্য গ্রহণ করে থাকেন। সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর চলে জেরা। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা দীর্ঘ সময় ধরে সাক্ষীকে জেরা করেন। আর এ জেরাও বিচারককে হাতে লিখতে হয়। ফলে সাক্ষ্য ও জেরা লিপিবদ্ধ করতে আদালতের সময় অনেক ব্যয় হয়। এ ছাড়া বাদী বা আসামিপক্ষ প্রায় সময়ই অভিযোগ করে থাকেন, যথাযথভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ লিপিবদ্ধ হয়নি। হাইকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ বলেন, প্রধান বিচারপতির স্বপ্ন, প্রায় দেড়শ’ বছরের বিচারব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়ে আধুনিক ও যুগোপযোগী করা। বিচার প্রক্রিয়ায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা। সর্বোপরি ডিজিটাল বিচারব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় এবং বিচারপ্রার্থীদের কষ্ট কমিয়ে আনা। আদালতে ডিজিটাল এভিডেন্স রেকর্ডিং চালু এরই অংশ।

সর্বশেষ খবর