রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে দাতাদের

রেকর্ড পরিমাণ অর্থ প্রত্যাহার

মানিক মুনতাসির

প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা জটিলতায় উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বাড়ছে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) উন্নয়ন সহযোগীরা। বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠকের পর প্রায় চার মাস কেটে গেলেও বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন শুরু হয়নি আজও। টানা চার বছর ধরে বাজেট সহায়তায় ফেরার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করছে না বিশ্বব্যাংক। একের পর এক প্রকল্প সহায়তার চুক্তি বাতিল করে অর্থ ফিরিয়ে নিচ্ছে উন্নয়ন সহযোগীরা।

শুধু তাই নয়, পাইপলাইনে জমা হয়ে রয়েছে বিপুল বৈদেশিক সহায়তার অর্থ। সরকারি সংস্থাগুলোর অদক্ষতার কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না ওই অর্থ। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণে সরকারের আর্থিক খাতের দুর্নীতি কমিয়ে আনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে গুণগতমান নিশ্চিত করারও পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক প্রতিবেদনেও এ ধরনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশ প্রতিদিনের এ প্রতিনিধিকে নিজস্ব কার্যালয়ে বলেন, প্রতি বছরই অর্থ প্রত্যাহারের মতো কিছু ঘটনা ঘটে। কিন্তু এর সুনির্দিষ্ট কারণ উন্নয়ন সহযোগীরা দিতে পারে না। তবে সব সময় চেষ্টা করা হয় প্রতিশ্রুত অর্থ সময়মতো ছাড় করে প্রকল্পের কাজে লাগানোর।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগে ওই প্রকল্প থেকে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ফিরিয়ে নেয় বিশ্বব্যাংক। যদিও পরে এ প্রকল্পে দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি সংস্থাটি। এর বাইরে গত কয়েক বছরে গুরুত্বপূর্ণ আরও ১০ প্রকল্প থেকে অর্থ ফিরিয়ে নেয় বিশ্বব্যাংক। প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি না থাকায় এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট প্রকল্প থেকে ৬৪০ কোটি, ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্প থেকে ৫৮৪ কোটি টাকা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া  ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের মাঝামাঝিতে দুর্নীতির অভিযোগে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট কী পরিমাণ অর্থ প্রত্যাহার করা হয়েছে তার চূড়ান্ত হিসাব এখনো পাওয়া যানি। তবে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৩-১৪ পর্যন্ত বছরে সবচেয়ে বেশি অর্থ প্রত্যাহার করেছে উন্নয়ন সহযোগীরা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ফেরত নিয়েছে তারা। সে বছর পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিলের কারণে অর্থ প্রত্যাহারের পরিমাণ বাড়ে। এরপর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৯ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা প্রত্যাহার করে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। এর আগে ২০১১-১২ অর্থবছরে তারা ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ফেরত নিয়েছে। এ ছাড়া ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩৪ কোটি ডলার, তার আগের বছর প্রায় ১০ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর