স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যে রেল সংযোগ গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার, তার খরচ পদ্মা সেতু নির্মাণের চেয়েও বেশি পড়বে। কারণ ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত রেলপথে তিনটি নদী থাকায় আগের পরিকল্পনা কিছুটা পরিবর্তন করে উড়ালপথে রেললাইন স্থাপনের নতুন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। নতুন প্রস্তাবে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার রেললাইন হবে মাটির উপরে উড়ালপথে। ফলে আগের প্রস্তাবের চেয়ে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করে নতুন ব্যয় নির্ধারণ হতে পারে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত প্রকল্পের নতুন ব্যয় নির্ধারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আজ বৈঠক হওয়ার কথা। প্রাথমিক প্রস্তাবে এই রেলপথ নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। আর্থিক প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। এপ্রিলের মধ্যে প্রকল্পটি একনেকে তোলা হবে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের ২৩ কিলোমিটার রেললাইন হবে উড়ালপথে। ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত যেতে বুড়িগঙ্গা এবং ধলেশ্বরী-১ ও ধলেশ্বরী-২ নদী পাড়ি দিতে হবে। উড়ালপথে এই তিনটি নদী অতিক্রম করবে রেল। পর্যাপ্ত ভূমি না থাকায় এবং জমির ব্যবহার কমাতেই উড়ালপথে রেললাইন নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পে সংযুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছে, সে অনুযায়ী এই রেলপথ মাটির উপর দিয়ে নির্মাণ করা সম্ভব নয়। নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। নতুন এই আর্থিক প্রস্তাব অনুমোদিত হলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যয় হবে তার চেয়েও বেশি। তবে পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে হলেও রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা দেবে এডিবি। এ ছাড়া চীনের পক্ষ থেকেও ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য চীন সরকার থেকে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সহায়তা পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। দুই ফেজে নির্মিতব্য এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ। রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রথম দিন থেকেই রেল চলবে। সে কারণে প্রকল্পটি একনেকে যাতে দ্রুত অনুমোদন করা যায় সে প্রচেষ্টা রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন গড়ে তোলা হবে ২০১৮ সালের মধ্যে।