সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
রানা প্লাজা ধসের ৩ বছর

শ্রদ্ধাভরে নিহতদের স্মরণ ক্ষতিপূরণ ও জড়িতদের শাস্তির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক ও সাভার প্রতিনিধি

শ্রদ্ধাভরে নিহতদের স্মরণ ক্ষতিপূরণ ও জড়িতদের শাস্তির দাবি

রানা প্লাজা ধসের তৃতীয়বার্ষিকী উপলক্ষে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে গতকাল সকালে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে তাদের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন বিভিন্ন সংগঠন, সহকর্মী ও স্বজনরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রানা প্লাজা ধসের তিন বছর পূর্তিতে গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শ্রমিকদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এ দিন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থা নানা কর্মসূচি পালন করে। গতকাল রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে আসেন শ্রমিকদের স্বজনরা। কবরস্থানে আসা বিভিন্ন শ্রমিক ও বিজিএমইএর নেতারাও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অশ্রুসিক্ত নয়নে স্বজনরা নিহত শ্রমিকদের কবরের পাশে বসে আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে রানা প্লাজায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের  ক্ষতিপূরণ এবং এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। শ্রমিক নেতারা জানান, তিন বছর পার হলেও এখনো অপরাধীদের শাস্তি হয়নি। আহত অনেকেই চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এখনো পরিশোধ হয়নি উল্লেখ করে অবিলম্বে তা পরিশোধের জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। জুরাইন কবরস্থানে গতকাল উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির নেতারা। এখানে ২৯১ জনকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। কিন্তু ডিএনএ না মেলার কারণে এখনো ১৭ জনের কবর বুঝে পাননি তাদের পরিবার। এ ঘটনায় এখনো ১৬২ জন নিখোঁজ আছেন। এদিকে স্বজনদের দাবি, অব্যবস্থাপনার কারণে কবরের সাইনবোর্ড ও কোড নম্বর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই। শ্রমিক নেতারা অবিলম্বে কবরগুলো সংস্কারের দাবি জানান। এ দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল’ মানববন্ধনের আয়োজন করে।

 এ ছাড়া প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে ‘রানা প্লাজা স্মরণ বন্ধন’ কর্মসূচি পালিত হয়। বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ফেডারেশন ২৪ এপ্রিল শ্রমিক শোক দিবস ও কারখানা বন্ধ রাখার দাবি জানান। প্রেসক্লাবের সামনে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে ইন্সটলেশন প্রদর্শন ও প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। 

সাভারের রানা প্লাজার সামনে নিহতদের স্মরণে নির্মিত শহীদ বেদি গতকাল ফুলে ফুলে ভরে যায়। ভবন ধসের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকেই রানা প্লাজার সামনে পোশাক কারখানার শ্রমিক, আহত, নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনরা জড়ো হতে থাকেন। তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ অ্যান্ট্রি ফায়ার অ্যান্ড ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন,  রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। সকালে রানা প্লাজার সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি কালো ব্যাজ ধারণ করে ঢাকা আরিচা-মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে রানা প্লাজার সামনে মালিক সোহেল রানার ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের স্বজনরা বলেন, তিন বছর পার হয়ে গেছে, এখনো অনেক নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকরা ক্ষতিপূরণ পাননি। ফলে অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে না পারায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি আহত শ্রমিকরা। অন্যদিকে নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান রানা প্লাজায় নিহত, নিখোঁজসহ সব শ্রমিক পরিবারের দুঃখের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। পরে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। এ ছাড়া ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার রানা প্লাজার সামনে নির্মিত শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। রানা প্লাজার সামনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় নিহতদের স্মরণে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এ সময় প্রিয় স্বজনের ছবি ও স্মৃতি তুলে ধরে অঝোরে কাঁদতে থাকেন অনেক স্বজন। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে ২৪ এপ্রিল শোক ও শ্রমিক নিরাপত্তা দিবস পালনে কালো ব্যাজ ধারণ করে দোষীদের শাস্তি প্রদানসহ আহত, নিহত ও নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। অন্যদিকে রানা প্লাজা ধসের তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে পোশাক কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষণা না করায় সাভার পাকিজা ডাইং, জিহান নিট কম্পোজিট লিমিটেড, হাই পয়েন্ট, আজিম গ্রুপ, ভিশন গার্মেন্টসসহ অন্তত ১৫টি পোশাক কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এ সময় মালিক পক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ শ্রমিক। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে কারখানাগুলোতে আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ খবর