শনিবার, ৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

শর্ত দিয়ে এমপিওর অর্থ ছাড়

আটকে গেছেন তিন শতাধিক শিক্ষক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন ও আকতারুজ্জামান

নতুন স্কেলে এমপিওভুক্ত (মান্থলি পে অর্ডার) শিক্ষকদের বেতনের জন্য চলতি বাজেটে ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে ওই অর্থ ব্যয়ে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে অর্থ বিভাগ, যার মধ্যে একটি হচ্ছে এমপিও ব্যবস্থার সংস্কার করা। এ ছাড়া অর্থ বিভাগ বলেছে, এ অর্থ ব্যয়ে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের অনিয়ম উদ্ঘাটিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যোগ্যতাভিত্তিক মূল্যায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করে তা দ্রুততার সঙ্গে অর্থ বিভাগকে অবহিত করতেও বলা হয়েছে। অষ্টম বেতন স্কেলে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুদান সহায়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদানের সারসংক্ষেপে এসব শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। ২৪ মার্চ সারসংক্ষেপটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠায় অর্থ বিভাগ। ২৬ মার্চ এটির অনুমোদন দেন মন্ত্রী। সেখানে অর্থমন্ত্রী নিজ হাতে নোট লিখে উল্লেখ করেন, ‘আমি এমপিও ব্যবস্থার সংস্কারে বেশি মনোযোগ দিতে চাই। শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের জন্য এমপিও ব্যবস্থা মোটেই কার্যকরী নয়।’

এরপর অর্থমন্ত্রী লেখেন, ‘শিক্ষার জন্য অন্তত নিম্নোক্ত সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন : (১) যথাযথ ক্লাসকক্ষ, (২) শিক্ষার বিভিন্ন উপকরণ বইপত্র, ব্ল্যাকবোর্ড, ল্যাবরেটরি সামগ্রী ইত্যাদি, (৩) শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সুবিধা এবং (৪) শিক্ষকদের মানসম্মত বেতন।’ এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী তার নোটে আরও উল্লেখ করেন, ‘সরকারি সহায়তায় সব বিষয়েই উন্নয়ন দরকার; খালি শিক্ষকদের বেতন দিলেই হবে না। তাই কোনো স্কুলে হয়তো বেতনই যথেষ্ট হতে পারে। অন্যত্র ক্লাসকক্ষ বা শিক্ষাসামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করা বেশি প্রয়োজনীয় হতে পারে।’ সারসংক্ষেপে এসব মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী এমপিও রিভিও কমিটির সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

আটকে গেছেন তিন শতাধিক শিক্ষক : নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ পাওয়ার পরও সারা দেশের বেসরকারি কলেজের তিন শতাধিক শিক্ষকের বেতন এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) হচ্ছে না। এই শিক্ষকদের সবাইকে ব্যবসায় শিক্ষা শাখার জন্য নিয়োগ দিয়েছে কলেজগুলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) দফায় দফায় যোগাযোগ করে, স্মারকলিপি দিয়েও কোনো সমাধান পাননি এই শিক্ষকরা। মাউশি কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রে এই শিক্ষকদের সরকারের পক্ষ থেকে বেতন না দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানই তাদের বেতন দেবে। শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক নয়।

সূত্রমতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর একটি পরিপত্র জারি করে। পরিপত্রে বলা হয়, পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত বিভাগ/শ্রেণিশাখা খোলার ক্ষেত্রে এরপর নিযুক্ত শিক্ষকের বেতন-ভাতা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বহন করবে। সরকার এটি বহন করবে না। ২০১৩ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরকার জানায়, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা অথবা উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন আবশ্যিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এরপর ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর আরেক পরিপত্রের মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কয়েকটি বিষয় সংযোজন, বিয়োজন ও বিষয়ের নাম পরিবর্তনের ফলে এমপিওর শর্তাবলি পরিমার্জন করা হয়। পরিপত্রের মাধ্যমে ১১টি বিষয়ের নাম পরিমার্জন করা হয়। অর্থায়ন ও উৎপাদন এবং বিপণনকে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন, ফিন্যান্স ব্যাংকিং ও বিমাকে ফিন্যান্স অথবা ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণনকে মার্কেটিং অথবা ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অথবা ম্যানেজমেন্ট নামে অবহিত করা হয়। পরিপত্রে আরও বলা হয়, বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের এমপিওপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না। গত বছর ১ জানুয়ারি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সরকারি ও এমপিওভুক্ত বিভিন্ন কলেজে এসব বিষয় অনুমোদন দেয়। বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকের স্বাক্ষরিত বার্তায় জানানো হয়, ছয় মাসের মধ্যে কলেজগুলোতে নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এমন পরিপত্রের পর এমপিওভুক্ত বিভিন্ন উচ্চমাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে এসব বিষয়ে তিন শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এর বিপরীতে মাত্র তিনজনের চাকরি এমপিও করার তথ্য জানা গেছে। চাকরি এমপিও না হওয়া শিক্ষকরা এমপিওভুক্তি চেয়ে ‘বাংলাদেশ উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানারে শিক্ষাসচিব ও মাউশি মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। পরিষদের সভাপতি সৈয়দা দিল আশরাফী অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রজ্ঞাপনের পর তিন শতাধিক শিক্ষকের নিয়োগের পর মাত্র তিনজনের বেতন-ভাতা ছাড় করা অনৈতিক। এটি মেনে নেওয়া যায় না। সব নিয়ম-নীতি মেনে নিয়োগ পাওয়ার পর যদি সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের বেতন-ভাতা দেওয়া না হয়, তবে দুর্দশার শেষ থাকবে না।’ মাউশির সহকারী পরিচালক হেলাল উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বরের পরিপত্রে শিক্ষকদের সরকারের পক্ষ থেকে বেতন না দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানই তাদের বেতন দেবে। তিনি বলেন, পরিপত্রে উল্লেখ আছে, নতুন অতিরিক্ত বিভাগ/শ্রেণিশাখা খোলার ক্ষেত্রে নিযুক্ত শিক্ষকের বেতন-ভাতা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বহন করবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর