শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

সৌদিতে অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা

রবিবার বৈঠক

সাখাওয়াত কাওসার

সৌদি আরবে কর্মী পাঠাতে অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রবাসী ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক তৈরি করা খসড়া মানতে চাইছে না বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি-বায়রা। তবে সৌদি আরব যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের স্বার্থের বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের ছাড় না দিতে অনড় মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, বিমান ভাড়া ছাড়া মাত্র ৪৪ হাজার ৭১০ টাকায় সৌদি আরবে লোক পাঠানো হবে। এরই মধ্যে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে আগামী রবিবার বায়রার সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে বসছে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সেলিম রেজা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সৌদি যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের স্বার্থের বিষয়টি মাথায় রেখেই অভিবাসন খরচের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। অতীতে নানা ধরনের অনিয়মের কারণে সৌদি কর্তৃপক্ষ লোক নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। রবিবার বায়রার সঙ্গে বসে বিষয়টি ঠিক করে নেব। বিমান ভাড়া নিয়োগকর্তা বহন করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সৌদি সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে এ বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। তবে অনেক কোম্পানি নিজ থেকেই কর্মীর বিমান ভাড়া বহন করে। একাধিক সূত্র বলছে, সৌদি আরবের কয়েকটি কোম্পানি থেকে অতিরিক্ত দামে ভিসা কিনে আনার কারণে দেশের রিক্রুটিং এজেন্সি শ্রমিকদের কাছ থেকে চড়া মূল্যে ভিসা বিক্রি করেছে। গাড়িচালক এবং গৃহপরিচারিকার ভিসাও ২৫-৩০ হাজার রিয়ালে কিনে তা শ্রমিকদের পকেট থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন। সোমবার মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ এ বিয়য়টি তুলে ধরেন। তিনি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিকে সৌদি আরবের ইয়ামামা ও সিডর কোম্পানির দেওয়া ভিসায় কোনো কর্মী না পাঠাতে অনুরোধ করেন। বৈঠকে সৌদিতে লোক পাঠায় এমন ২৪টি রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি, বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদ, মহাসচিব রুহুল আমীন স্বপন উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থাপন করা অভিবাসন ব্যয়ের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়, নিয়োগকর্তা সৌদি আরবের ভিসা ফি ৪২ হাজার টাকা, সৌদিতে ডকুমেন্টেশন ও সত্যায়ন ফি ৫ হাজার , সৌদিতে যাওয়ার পর মেডিকেল ফি ২ হাজার , ইকামা ফি ১৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১০ হাজার টাকা বীমা খরচ বহন করবে। তবে সৌদিতে লোক পাঠায় রিক্রুটিং এজেন্সির কয়েকজন বলেন, ৪৫ হাজার টাকায় সৌদিতে লোক পাঠানো হলে আমাদের লাভ থাকবে না। মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে আমাদের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা। তাদের দাবি হলো দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে ফি নির্ধারণ করা।

শ্রমবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাত বছর পর সৌদি সরকার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর এমন জটিলতা অনাকাঙ্ক্ষিত। এমন অবস্থা চললে সৌদি কর্তৃপক্ষ যে কোনো সময় ভিসা বন্ধ করে দিতে পারে। বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী রবিবার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পুনরায় বৈঠক হবে। এর আগে আগামী শনিবার সৌদিতে লোক পাঠায় এমন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের নিয়ে বৈঠক করে করণীয় ঠিক করব। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে রিক্রুটিং এজেন্সির বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া। প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ১০ আগস্ট বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে যে কোনো ক্যাটাগরির শ্রমিক নেওয়ারও কথা জানায় সৌদি সরকার। এর আগে বাংলাদেশ থেকে কেবল গৃহকর্মী হিসেবে সৌদিতে জনশক্তি নেওয়া যেত।

সর্বশেষ খবর