অপরাধীচক্র শনাক্ত করতে কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি। মোবাইল ফোনে যারা হুমকি দিচ্ছে, তাদের ধরতে আজ থেকে বিটিআরসি দুই ধরনের পদক্ষেপ চালাবে। একটি হলো টেকনিক্যাল। অন্যটি সিকিউরিটির বিষয়। এমন তথ্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাজাহান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, অপরাধী শনাক্তে প্রথমে নিবন্ধিত আইডিটি কার নামে আছে, কোথা থেকে কল করা হয়েছে সেটি দেখা হচ্ছে। পরে আইডি শনাক্ত করে পুরো ডাটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেওয়া হবে। ডাটা কালেকশনের মাধ্যমে অপরাধী শনাক্ত করতে একটু সময় বেশি লেগে যায়। আাাগামী এক মাসের মধ্যে এর সুফল পাবে দেশের জনগণ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের পরও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নানা অপরাধ করছে প্রতারকচক্র। যে উদ্দেশ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করা হয়েছিল, সেই নিরাপত্তার পুরো সুফল এখনো পাননি গ্রাহকরা। তাদের অনেকের অজান্তেই গোপন তথ্য ব্যবহার করে বা সিম নম্বরটি ক্লোন করে তা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করছে অপরাধীরা। বিটিআরসি বিষয়টি স্বীকার করে বলছে, প্রতারকচক্র বিটিআরসির নামে কল করে বা এসএমএস পাঠিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য, গোপন পিন, পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিচ্ছে। জানা যায়, ১৩ অক্টেবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদকে তার মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এর আগে ১৭ জুন টেকনোমিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) পরিচালক যশোদা জীবন দেবনাথের কাছে চাঁদা দাবি করা হয়।
১১ জুন বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের সেরেস্তাদারবাড়ি শ্রী গুরু আশ্রমের পুরোহিত শ্রীবাস চক্রবর্তীকে (৪৫) হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর ১৪ জুন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাঞ্চল উপশহরের আলমপুরার ঠিকাদার সোহেলকে কল করে এক সপ্তাহের মধ্যে মেরে ফেলার হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা। ভিন্ন ব্যক্তির সিম ক্লোন করে চাঁদাবাজি, হত্যার হুমকিসহ নানা অপরাধ করছে প্রতারকচক্র। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের পরও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ না কমায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারও কারও মোবাইলে গভীর রাতে কল করে গুপ্তধন দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করা হয়। জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। বিটিআরসি বলছে, সন্দেহজনক কল বা এসএমএসের উত্তর না দিয়ে দ্রুত ২৮৭২ নম্বরে যোগাযোগ করলে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে এবং দ্রুত তাকে শনাক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কল বা চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানানোর অনুরোধ করেছে বিটিআরসি। বিটিআরসি বলেছে, সম্প্রতি প্রতারকচক্র বিটিআরসির নামে কল করে ও এসএমএস দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে সিম রেজিস্ট্রেশন তথ্য, অর্থ এবং ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর নম্বর থেকেও এসএমএস পাঠিয়ে পিন নম্বর বা অর্থ চাওয়া হচ্ছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের জটিলতা দূরীকরণের নামে বিটিআরসি থেকে কল এবং এসএমএস পাঠিয়ে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য বা গোপন পিন বা পাসওয়ার্ড চাওয়ার কোনো নিয়ম নেই।