শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ট্রেন চলছে পুরনো টাইম টেবিলেই

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

পুরনো নিয়মেই চলছে রেলসেবা। বাংলাদেশ রেলওয়ের সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৫ জুন ওয়ার্কিং টাইম টেবিল (ডব্লিউটিটি) প্রণয়ন করা হয়। আড়াই বছর ধরে সেই পুরনো টাইম টেবিলে রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল করছে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে যাত্রীসেবার মান, বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনা এবং ব্যয়ও। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নতুন নতুন ট্রেন সার্ভিস চালুর পরও শতভাগ যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। অফিস আদেশের ভিত্তিতে পুরনো টাইম টেবিলে নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন তথ্য সংশোধনের মাধ্যমে ট্রেন পরিচালনা করায় ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে ট্রেন চালকসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্য থেকে অভিযোগ উঠেছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে বিধি অনুযায়ী প্রতি বছর দুবার টাইম টেবিল প্রণয়নের বিধান রয়েছে। শীত ও গ্রীষ্মকালে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ট্রেনের শিডিউল পরিবর্তন হয় বিধায় বছরে দুটি টাইম টেবিল প্রণয়ন করা হতো। রেলের চার ধরনের ডব্লিউটিটির মধ্যে ওয়ার্কিং টাইম টেবিল রেলওয়ের ট্রেন পরিচালনা ও সরকারি কাজে ব্যবহার করা হয়। সিট টাইম টেবিল দিয়ে রেলের বিভিন্ন কন্ট্রোলের মাধ্যমে ট্রেন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা হয়। বোর্ড টাইম টেবিল জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য দৃশ্যমান স্থান বা স্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়। টাইম টেবিল প্রণয়নে অনীহার কারণে আড়াই বছর ধরে দেশের প্রায় প্রতিটি স্টেশনে পুরনো সময়সূচি সাঁটানো রয়েছে। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন যাত্রীরা। অন্যদিকে পকেট টাইম টেবিল না থাকায় ট্রেন সার্ভিস সম্পর্কে যাত্রীরাও সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না। রেলওয়ে ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর পয়লা এপ্রিল নতুন টাইম টেবিলের মাধ্যমে ট্রেনের সময়সূচির পরিবর্তন করা হয়। ট্রেন ট্রাফিকের মুভমেন্ট, ট্র্যাকের বর্তমান অবস্থান, বিভিন্ন প্রকল্পের চলমান কাজ, যাত্রী চাহিদা, রোলিং স্টকের সর্বোচ্চ ব্যবহার, রাজস্ব বাড়ানোর প্রয়োজনে টাইম টেবিল প্রণয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানের জনপ্রতিনিধি, যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে স্থানীয় স্টেশন মাস্টার/ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আলোচনার মাধ্যমে ডব্লিউটিটির বৈঠকে উত্থাপন করেন। বিভাগীয় ট্রাফিক অফিসারের নেতৃত্বে কমিটির বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নিয়ে এডিজি (অপারেশন) টাইম টেবিল চূড়ান্ত অনুমোদন করেন। বর্তমানে রেলের ৫০তম টাইম টেবিল কার্যকর রয়েছে। সর্বশেষ কয়েক বছর ধরে বেশকিছু ট্রেন সার্ভিস বৃদ্ধি ও রেলওয়ে ট্র্যাক বাড়ানো হলে ট্রেন পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ায় ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি ডব্লিউটিটির সংশোধনী আনে রেলওয়ে। সীমিত পরিসরে সংশোধনী ছাপা হলেও প্রায় দুই বছরের ব্যবধানে এর কপি শেষ হয়ে যায়। এতে পুরনো টাইম টেবিলের মাধ্যমে কোনোরকমে ট্রেন চালাচ্ছেন ট্রেনচালকরা। ডব্লিউটিটি ট্রেন অপারেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও পরিবহন শাখার সেবার মান বৃদ্ধিতে এর ব্যবহারও কমছে। পাশাপাশি সংস্কারের পর কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা থাকলেও বিলম্বে পৌঁছার কারণে বিভিন্ন ট্রেনের পরিচালন ব্যয়ও বাড়ছে।

 ২০১৪ সালে সর্বশেষ ৫০তম ডব্লিউটিটি প্রণয়নের পর রেলের দুই অঞ্চলে চারটি নতুন আন্তনগর ট্রেন চালু করা হয়। ট্রেনগুলো হচ্ছে পূর্বাঞ্চলের বিজয়, সোনার বাংলা ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চলে চালু হয় ফরিদপুর এক্সপ্রেস। ওয়ার্কিং টাইম টেবিল (ডব্লিউটিটি) না থাকায় এখনো পরিপূর্ণ যাত্রাবিরতি, গন্তব্যে পৌঁছার সময় নির্ধারণ করতে পারেনি রেলওয়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ট্রেনচালক বলেন, ট্র্যাকের সংস্কার কিংবা নড়বড়ে রেললাইন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৌশল বিভাগ বিভিন্ন সেকশনে ট্রেনের গতিসীমা নির্ধারণ করে দেয়। টাইম টেবিল না থাকায় নির্দেশনা ও ট্রেনের গতিসীমার পরিবর্তন সম্পর্কে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী আবদুল হাই বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, টাইম টেবিলে বিশেষ বিবেচনায় বিভিন্ন সময় দফতরাদেশ দিয়ে ট্রেন চলাচলের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক এসব কাজ করা হয়। নতুন ট্রেন ও ডাবল লাইনের উদ্বোধনসহ নানাবিধ কাজের কারণে ওয়ার্কিং টাইম টেবিল প্রণয়ন করা হয়নি। সবকিছু ঠিক করেই দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন টাইম টেবিল প্রণয়ন করা হবে বলে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর