শিরোনাম
রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ডলারের দর বৃদ্ধিতে হঠাৎ অস্থির মুদ্রাবাজার

কারসাজির শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের

আলী রিয়াজ

হঠাৎ করে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মার্কিন ডলারের দর বাড়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ টাকা। ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার ৮৫ থেকে ৮৬ টাকা কেনাবেচা হয়। আর ব্রিটিশ পাউন্ডের দর প্রায় ৭ টাকা বেড়ে ১১০ টাকায় ওঠে। তবে বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিনে শেষবেলায় ডলারের দাম পড়তে শুরু করে। সর্বশেষ ৮২/৮৩ টাকায় লেনদেন হয়। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকার পরও হঠাৎ ডলারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির পেছনে কারসাজির শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বাজার মনিটরিংয়ের অভাবেই ডলারের দর বৃদ্ধির মূল কারণ। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের এমন মূল্য বৃদ্ধির কোনো কারণ খুঁজে পায়নি। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে তফসিলি ব্যাংকের নির্বাহীদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসে। ওই বৈঠকে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বাজারের ডলারের সংকটের কথা বলা হয়েছে। এদিকে ডলারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির পেছনে কোনো ধরনের কারসাজির জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায়ীরা ডলার মূল্য অস্থিতিশীলতার কারণ হিসেবে বলেন, আমদানির তুলনায় রপ্তানিতে কম প্রবৃদ্ধি ও রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রবাহের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম সামান্য বাড়ছে। তবে রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের আমদানি দায় পরিশোধের চাপ বাড়ায় সম্প্রতি হঠাৎ করে বেড়ে ডলারের দাম ৮৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

এদিকে রমজানকে সামনে রেখে ডলার মূল্যের এই অস্থিরতায় শঙ্কিত করে তুলেছে ব্যবসায়ীদের। যারা ইতিমধ্যে রোজার পণ্য আমদানির জন্য এলসি করেছেন তারাই বেশি শঙ্কিত। আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডলারের এই অস্থিরতা আগামী রমজানে পণ্য মূল্যের ওপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে। জানতে চাইলে মেঘনা ব্যাংকের এমডি নুরুল আমিন বলেন, সাম্প্রতিক সময় বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়েছে। এর চেয়ে বড় বিষয় গত কয়েক মাস রেমিট্যান্সের নিম্ন গতি নগদ ডলার সরবরাহে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে এই অস্থিরতা। তবে চলতি সপ্তাহের মধ্যে এটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে মনে হয়। জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোতে ডলার বিক্রি হয়েছে সিটি এনএ ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা, এইচএসবিসি ৮৪ টাকা ৭৫ পয়সা, এবি ব্যাংক ৮৪ টাকা ২০ পয়সা, সাউথইস্ট ব্যাংক ৮৩ টাকা ৮৫ পয়সা। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ক্রয় করেছে ৮১ টাকা ৭০ পয়সা। বিক্রি করেছে ৮৪ টাকায়। ওই দিন মতিঝিলের বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৮৫ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই দিন আন্তব্যাংক গড় হিসেবে প্রতি ডলারের বিক্রয় মূল্য ছিল ৭৯ টাকা ৯৫ পয়সা। সংকটের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ও কৃষি ব্যাংক গত সপ্তাহে যথাক্রমে দেড় কোটি ডলার ও ৬০ লাখ ডলার ক্রয় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে। বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার ক্রয় করার জন্য জানিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাজারে ডলারের সংকট রয়েছে। চাহিদা মতো ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।  বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরেই ডলারের দর স্থিতিশীল ছিল। বিগত তিন মাসে ডলারের দর ৭৮ টাকা থেকে ৮০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল থেকে ডলারের দর হু হু করে বাড়তে থাকে। প্রতিদিনই এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে। গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ৮৫ টাকায় পৌঁছে। ডলারের লেনদেনের চিত্রে দেখা গেছে, ১৬ এপ্রিল ডলার বিক্রি হয়েছে ৭৯ টাকা ৬০ পয়সা, ১৭ এপ্রিল ৮০ টাকা ২০ পয়সা, ১৮ এপ্রিল ৮০ টাকা ৭২ পয়সা, ১৯ এপ্রিল ৮২ টাকা ৩০ পয়সা, ২৭ এপ্রিল ৮৪ টাকা ৬০ পয়সা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম কমানোর জন্য অন্য সব ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে। ডলারের বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে কোনো ব্যাংক কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম বাড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে আন্তব্যাংক ডলারের গড় দরের সঙ্গে আমদানিতে ২ টাকার বেশি না নিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, হঠাৎ টাকার অবমূল্যায়ন হলো অর্থাৎ ডলারের দাম বেড়ে গেল আবার হঠাৎ কমে গেল এটা মার্কেট ফোর্সের জন্য হয়নি। অস্থিরতাটা অস্থায়ী। আরও কারণ আছে এর পেছনে। তথ্যের অসামঞ্জস্যতা, বাজার পর্যবেক্ষণে ঘাটতি রয়েছে মুদ্রাবাজারে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার ঠিক রাখতে ঝুঁকি বণ্টন-পদ্ধতি বা হেজিং নিয়ে ভাবতে হবে ব্যাংকগুলোকে।

সর্বশেষ খবর