শনিবার, ৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিলেট বিএনপিতে ফের বিভক্তি!

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট বিএনপিতে ফের বিভক্তি!

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রায় সপ্তাহখানেক আগে ঘোষিত সিলেট মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে আশান্বিত হয়েছিলেন নেতা-কর্মীরা। তারা মনে করেছিলেন, সদ্য ঘোষিত নতুন কমিটির অধীনে নতুন স্বপ্নে রাজনীতির ময়দানে পোক্ত অবস্থান তৈরি করবে সিলেট মহানগর বিএনপি। কিন্তু কমিটি ঘোষণার সপ্তাহখানেক যেতে না যেতেই প্রকট হয়ে উঠেছে মহানগর বিএনপির বিভাজন। পূর্ণাঙ্গ কমিটির যাত্রার শুরুতেই এই বিভাজন ঘিরে শঙ্কিত দলটির নেতা-কর্মীরা।

জানা যায়, প্রায় ১৪ মাস পর গত সপ্তাহে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। কমিটি ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই চলছে আলোচনা-সমালোচনা। গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ঢাউস কমিটি, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, ত্যাগীদের তুলনামূলকভাবে অবমূল্যায়নসহ নানা বিষয় সামনে এনে সিলেট বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমালোচনা করছেন। তবে সেসব ছাপিয়ে এবার মহানগর বিএনপির বিভাজনের প্রকাশ্য চিত্রই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা যায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর গত সোমবার নগরীর তাঁতীপাড়ায় প্রথমবারের মতো জরুরি সভা করে মহানগর বিএনপি। মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের বাসায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় বিএনপির দুটি অংশই যোগ দেয়নি। এর মধ্যে একাংশ একই সময়ে নগরীর আম্বরখানায় আলাদা সভা করে। অপরাংশ কোনো সভাতেই অংশ নেয়নি। তাঁতীপাড়ায় অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন- মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, সহ-সভাপতি ফরহাদ চৌধুরী শামীমসহ বেশ কয়েকজন নেতা।

অন্যদিকে আম্বরখানার সভায় উপস্থিত ছিলেন মহানগর শাখার সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান, ডা. নাজমুল ইসলাম, উপদেষ্টা মো. ছাইদুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল আজিজসহ কয়েকজন নেতা। ওই দুটি সভার কোনোটিতেই ছিল না সহসভাপতি সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম সিদ্দিকী, সৈয়দ মঈন উদ্দিন সোহেল ও কাউন্সিলর দিনার খান হাসু, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, মাহবুব চৌধুরীসহ কয়েকজন পদবিধারী নেতা। এদিকে গত বৃহস্পতিবার নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে মহানগর বিএনপির প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন নগরীর আরেক স্থানে বিবদমান একটি পক্ষ সভা করে।

পূর্ণাঙ্গ কমিটির যাত্রার শুরুতেই সিলেট মহানগর বিএনপি যে তিনটি ধারায় বিভক্ত, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে দলটির সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন পর কমিটি এসেছে, এখন সব বিভেদ ভুলে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময়। কিন্তু তা না করে নিজেদের মধ্যে বিভাজন দলের জন্য অশনি সংকেত।

এদিকে দলীয় বিভক্তি দূর করতে আগামী সোমবার কর্মিসভা ও অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মহানগর বিএনপি।

 সে অনুষ্ঠানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট মহানগরীর ওয়ার্ড বিএনপির এক সভাপতি বলেন, ‘পদলোভী নেতারা নিজেদের স্বার্থে বিভেদ ভুলতে পারছেন না। তাদের বিভাজনে দলের ক্ষতি হচ্ছে, সাধারণ নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন।’

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, ‘অনুমোদিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রাজনৈতিক জ্যেষ্ঠতা রক্ষা হয়নি। অনেক জুনিয়রকে সিনিয়র নেতাদের ওপরের পদ দেওয়া হয়েছে। এতে কমিটি ভারসাম্য হারিয়েছে। এ ছাড়া দলের পরীক্ষিত, ত্যাগী ও বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যারা রাজপথে ছিলেন তাদের কমিটিতে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। যে কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটির যাত্রার শুরুতেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের এবং সব ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কমিটিতে যথাযথ মূল্যায়নেরও দাবি জানান।

সর্বশেষ খবর