সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

অর্পিত সম্পত্তির মামলায় ঘুষ ২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা

ড. বারকাতের গবেষণা তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্পিত সম্পত্তির মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে প্রতিটি পরিবারের ব্যয় হচ্ছে গড়ে ২ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এর অর্ধেক প্রায় এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় হয়েছে ঘুষ দিতে। অর্পিত সম্পত্তি ফিরে পেতে এ যাবৎ দুই লাখ আবেদনকারীকে ঘুষ দিতে হয়েছে কমপক্ষে দুই হাজার ২৭০ কোটি টাকা, যা ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ২ শতাংশ। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন এবং এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ফলাফল’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এলআরডির সহায়তায় এ গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। গবেষণার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে ড. আবুল বারকাত বলেন, আদালতের ভিতর বিলম্বের জন্য বিপুলসংখ্যক মামলার তুলনায় আদালত বা বিচারকের সংখ্যা স্বল্পতা এবং অর্পিত সম্পত্তি মামলার প্রতি কম গুরুত্ব প্রদান এজন্য বিশেষভাবে দায়ী। আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ায় আগে থেকেই ঘুষ পর্ব শুরু হয়। তহশিলদার, উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় থেকে নথি তোলার সময়ই বেশি পরিমাণ অর্থ ঘুষ দিতে হয়। এরপর আদালতে দীর্ঘ সময় মামলা ঝুলে থাকে। সে সময় আইনজীবীদের ফি বাবদ ব্যয়, যাতায়াত ইত্যাদি নানা খরচ করতে হয় সম্পত্তি ফেরত চাওয়া ভুক্তভোগীদের। ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে ৪৩টি কেস স্টাডিতে ৪৬ জন মূল তথ্যদাতার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। গবেষণায় অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়নে সরকারের কাছে ১৯টি সুপারিশ করা হয়। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বক্তারা। ভুক্তভোগীরাও তুলে ধরেন মাঠপর্যায়ের চিত্র।

সভাপতির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, তারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা বলে মুখে ফেনা তোলেন। বাস্তবতা হচ্ছে মুনাফিকিরও একটা সীমা থাকে। বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ থাকছে না। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বলে যারা দায়িত্ব নিয়েছেন, তারাই সব ভুলে গেছে। আমরা সেই মুনাফিকি করতে দেব না। এই দেশের পেছনে প্রতিটি মানুষের ও বংশের রক্ত রয়েছে।

এলআরডির চেয়ারপারসন ও মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির বলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও যে আইনটি নিয়ে কথা বলছি, এটি সাংঘাতিক লজ্জার। গবেষণায় এসেছে, আইন হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কোর্টের নির্দেশনাও বাস্তবায়ন করছে না প্রশাসন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে সংখ্যালঘুর অস্তিত্ব রক্ষা করেই করতে হবে। কিন্তু এই ভাবনাটি যেমন বিএনপির মধ্যে দেখি না, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারের ৯ বছরের শাসনামলেও তা দেখা যায়নি।

সর্বশেষ খবর