সোমবার, ৫ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
জবাবদিহিতা

জনবান্ধব কার্যক্রম বিট পুলিশিংয়ের

মো. আছাদুজ্জামান মিয়া

জনবান্ধব কার্যক্রম বিট পুলিশিংয়ের

বিট পুলিশিংয়ের অন্যতম কার্যক্রম হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়া সম্পর্কে নির্দিষ্ট ফরমে পরিচিতিমূলক তথ্য সংগ্রহ করার কার্যক্রম সঠিক ও সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিবিড়ভাবে তদারকি প্রয়োজন। এ অবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিবিড় তদারকির মাধ্যমে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাড়িওয়ালা তথ্য থানা পর্যায়ে থানার প্রতিটি বিটকে তিন ভাগে ভাগ করে অফিসার ইনচার্জ, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ও ইন্সপেক্টর (অপারেশন) ফরম বিতরণ ও সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন হয়েছে কিনা তা মনিটরিং করেন। তারা এসআই/এএসআইদের সমন্বয়ে টিম গঠন করে নিজ নিজ অংশে প্রতিটি হোল্ডিংয়ের নম্বর ধরে সব লোকের কাছে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য ফরম পৌঁছেছে কিনা তা নিশ্চিত করেন। যারা ফরম পাননি তাদের কাছে ফরম পৌঁছাতে হয়। আর যে ফরমগুলো বিতরণ করা হয়েছে সেগুলো সংগ্রহ করা হয়। এভাবে ১নং বিট শেষ করে ২নং বিট এবং ২নং বিট শেষ করে পর্যায়ক্রমে সব বিটের কার্যক্রম শেষ করা হয়। জোনাল এসিরা এ কার্যক্রম তদারকি করেন। পুলিশ অফিসাররা সৌজন্যমূলক আচরণের মধ্য দিয়ে কুশল বিনিময় করেন এবং জানতে চান পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন আছে কিনা। এর মাধ্যমে আন্তব্যক্তিক যোগাযোগ নিশ্চিত করা হয়। ছুটির দিনে প্রতিটি থানা এলাকায় সচেতনতামূলক মাইকিং করা হয়েছে। মাইকিংয়ের ভাষা এরূপ ‘এতদ্বারা সম্মানিত নাগরিকদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, জননিরাপত্তার স্বার্থে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করা হয়েছে। ফরমগুলো পূরণ করে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। যারা ফরম পাননি তাদের সংশ্লিষ্ট থানা হতে ফরম সংগ্রহ করে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।’ এ বক্তব্য রেকর্ড করেও প্রচার করা হয়েছে। স্থানীয় ডিস চ্যানেলে ক্যাবল অপারেটরদের মাধ্যমে বিট পুলিশিং সংক্রান্তে প্রচার করা হয়েছে। বিভাগ পর্যায়ে উপ-পুলিশ কমিশনার, এডিসি ও এসির সমন্বয়ে টিম গঠনের মাধ্যমে ভাড়াটিয়ার তথ্য ফরম বিতরণ ও সংগ্রহ কার্যক্রম মনিটরিং করে সব নাগরিকের কাছে ফরম পৌঁছানোর নিশ্চয়তা বিধান করছেন। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিকদের তথ্যের সংরক্ষণ এবং দ্রুততম ও বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে গত ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর Citizen Information Management System সফটওয়্যারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের বড় বড় শহরে নাগরিক তথ্য সংরক্ষণ এবং বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে এ তথ্য ব্যবহারের নিয়ম আছে। প্রাথমিকভাবে বাড়ি, স্থাপনা, প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্য হোল্ডিং নম্বর, রোড নম্বর এবং মহল্লাভিত্তিক বোর্ড ফাইলে প্রতি থানায় সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে CIMS Software-এর মাধ্যমে তথ্যাদি এন্ট্রি-পূর্বক তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ডিজিটাল মেলা-২০১৬-তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী CIMS সফটওয়্যারের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং নাগরিক তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। CIMS সফটওয়্যার সফলভাবে কাজে লাগানো এবং অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন একটি সম্পূর্ণ এবং নির্ভুল ডাটাবেজ। ঢাকা মহানগরীতে বসবাসকারী প্রত্যেক পরিবারের ডাটাবেজ তৈরির কার্যক্রম দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে বাড়ি/স্থাপনা/প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের অব্যাহত প্রক্রিয়া এবং উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির ফল ইতিমধ্যে নগরবাসী পেতে শুরু করেছেন। কারণ এটা স্পষ্ট যে, পুলিশের অব্যাহত অভিযান এবং জনগণের সক্রিয় সহযোগিতার কারণে এ মহানগরীতে জঙ্গি সন্ত্রাসীদের তৎপরতা চালানোর সুযোগ কমে আসছে। পাশাপাশি সামাজিক অপরাধও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বেড়েছে পুলিশের জবাবদিহিতা। তবে এতে আত্মতুষ্টির কোনো অবকাশ নেই। পুলিশ এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে একটি টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। পুলিশ-জনতার সম্মিলিত উদ্যোগে অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের মাধ্যমে সমাজ থেকে পুলিশভীতি ও অপরাধভীতি দূর করাসহ প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তাবোধ বাড়ানোই ডিএমপির লক্ষ্য। ‘জনবান্ধব পুলিশিং’ এই উদ্যোগ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি যৌক্তিক পরিণতিতে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পুলিশভীতি ও অপরাধভীতি দূরীভূত করে নিরাপদ রাজধানী বিনির্মাণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আশাবাদী। লেখক : কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

সর্বশেষ খবর