শনিবার, ১০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে ১৫২ সরকারি বাড়ি জবরদখলে

কব্জা করে রেখেছেন রাজনৈতিক নেতা মুক্তিযোদ্ধা ও চাকুরে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বেদখল হয়ে গেছে ১৫২টি সরকারি পরিত্যক্ত বাড়ি। এসব বাড়ির দখলদারদের তালিকায় রয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারীসহ নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাদ নেই সরকারি বিভিন্ন সংস্থাও। শত শত কোটি টাকার বাড়িগুলো উদ্ধারের জন্য দুই বছর আগে একটি তালিকাও তৈরি করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগ। তবে এখনো উদ্ধারের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, সরকারি বাড়ির অবৈধ দখলদারদের সবাই প্রভাবশালী। এ ছাড়া আইনি নানা সমস্যাও রয়েছে এসব বাড়ি নিয়ে। তাই চাইলেও প্রশাসন উচ্ছেদের উদ্যোগ নিতে পারছে না। রমজানের পর অবৈধ দখলে থাকা এসব বাড়ি উদ্ধারের জন্য সবাইকে নিয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। জানা যায়, চট্টগ্রামে বছরের পর বছর ধরে বেদখল রয়েছে ১৫২টি সরকারি বাড়ি। এসব বাড়ির দখলদারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সরকারি চাকরিজীবী। আবার অনেকে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের নামে বাড়ি দখল করে রেখেছেন। দখলে থাকা এসব বাড়িতে নিজে বসবাস করার পাশাপাশি কেউ কেউ আবার ভাড়াও দিয়েছেন। অবৈধ দখলে থাকা এসব বাড়ি কৌশলে নিজেদের করে নিতে নানাভাবে তদবির চালাচ্ছেন। এ জন্য দখলদারদের কেউ কেউ ভুয়া ও জাল দলিল তৈরি করেন। বাড়ি দখলে রাখতে আদালতে ঠুকে দিয়েছেন স্বত্ব ঘোষণা মামলা। বেদখলে চলে যাওয়া বেশির ভাগ বাড়ির অবস্থান নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনি, খুলশী কলোনি ও শেরশাহ কলোনিতে।

২০১৫ সালের জুলাই মাসে অবৈধ দখলে থাকা বাড়িগুলোর তালিকা তৈরি করা হয়, যা রয়েছে ফাইলবন্দী। ওই তালিকায় বলা হয়, পরিত্যক্ত ১৫২টি বাড়ি অবৈধ দখলদারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব অবৈধ দখলদারের তালিকায় রয়েছে কিছু সরকারি সংস্থাও। যার মধ্যে অন্যতম নগরীর ফিরোজ শাহ হাউজিং এস্টেট ডব্লিউ/এইচ-৯ নম্বর বাড়ি দখল করে তৈরি করা হয়েছে পুলিশ বিট অফিস। একই এলাকার ডব্লিউ/এ-১ নম্বর বাড়ি দখল করে রেখেছে সিটি করপোরেশন। জামালখান লেন ১৬/৪৬১ নম্বর বাড়ি দখলে রেখেছেন জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের অফিস সহকারী সবদের হোসেন। পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনির ৩ ও ৪ নম্বর প্লট দখলে রেখেছে চট্টগ্রাম রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি। এম এম আলী রোডের ১৮ নম্বর বাড়িটি দখলে রেখেছে জাতীয় মহিলা সংস্থা। নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ৩ নম্বর রোডের ২০/বি-২ নম্বর বাড়িটি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আফলাতুনের স্ত্রী আয়েশা খাতুন অবৈধভাবে দখল করে আছেন। এটি নিয়ে উচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলা চলমান আছে। নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ৩ নম্বর রোডের ৫৪/বি-২ নম্বর বাড়িটি অবৈধভাবে দখল করে আছেন ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু মো. নুরুল ইসলাম। হাই কোর্টে রিট করে বাড়িটিতে বসবাস করছেন তিনি। নয়াশহর খুলশী কলোনির ৭০ নম্বর বাড়িটি ব্যবহার করছেন গণপূর্তের উচ্চমান হিসাব সহকারী আবদুল সালাম। জামালখান লেনের ২৮২ নম্বর বাড়িটিতে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন আবুল কাশেম চৌধুরী। ৯৬/১১৬ নম্বর বাড়িটি অবৈধভাবে দখল করেছেন কর্ণফুলী পেপার মিলের অবসরপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক কাজী রেজাউল করিম। লালখান বাজারের চাঁনমারী রোডের ২২০ নম্বর বাড়িটি অবৈধভাবে দখল করেছেন পুলিশের সাবেক ওসি মৃত আবদুল মালেক সরদারের পরিবার। পাঁচলাইশ থানার কে বি ফজলুল কাদের রোডের ১৬ নম্বর বাড়িটি অবৈধভাবে দখল করে আছেন চমেকের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান নূরজাহান ভূঁইয়া।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর