শনিবার, ১০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

রেলের সময়ানুবর্তিতা বাড়ছে ছয় বছরে অগ্রগতি ৩০ ভাগ

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

রেলের সময়ানুবর্তিতা বাড়ছে ছয় বছরে অগ্রগতি ৩০ ভাগ

রেলওয়েতে ছয় বছরের ব্যবধানে সময়ানুবর্তিতা ২৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়ে ৯২.৬৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে গতি। ট্র্যাক (রেললাইন) সংস্কার, নতুন ইঞ্জিন ও কোচ সংগ্রহ, টিকিটিং-ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিভিন্ন সেকশনে একাধিক সিঙ্গেল লাইনকে ডাবলে রূপান্তর, পুরনো সেতু সংস্কার ও লোকবল নিয়োগের কারণে রেলের সময় ও গতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এবারের ঈদেও যাত্রীদের সুবিধায় ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা ঠিক রাখতে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা ঠিক রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান রেল কর্মকর্তারা। সময়ানুবর্তিতাসহ সার্বিক বিষয় দেখভালে ঈদে থাকবে রেলের পাশাপাশি প্রশাসনের মনিটরিং সেল।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ট্রেন চলাচলে উন্নয়নের ক্ষেত্রে জাপানসহ অন্যান্য দেশ ট্রেনের সময়ানুবর্তিতার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়। আমাদের দেশে সেই তুলনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে এই সময়ানুবর্তিতায়। কমেছে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ও। আমরা চেষ্টা করছি যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে এই সময়ানুবর্তিতার প্রতি গুরুত্ব দিতে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রেলের উন্নয়ন ও গতিশীলতা বাড়ছে। এতে রেলের চলমান প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ হলে আরও গতিশীল হবে। এক-দেড় বছরের মধ্যে টিকিট সংকট যাতে কমে আসতে পারে সেই পরিকল্পনায় কাজ চলছে।’

পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা (সিসিএম) সরদার শাহাদাত আলী বলেন, রেলের সময়ানুবর্তিতা বৃদ্ধির বিষয়টি ধারাবাহিক উন্নয়ন   কর্মকাণ্ডের অংশ। বর্তমানে রেলের গতি বেড়ে ৬০ থেকে ৭৫ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। রেলের পরিবহন বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, ট্র্যাকের কারণে নতুন কোচ ও ইঞ্জিন আমদানি সত্ত্বেও সেবার মানে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে রেলওয়েকে। গত ছয় বছরে শতাধিক কোচ ও ইঞ্জিন আমদানি সত্ত্বেও ট্রেনের গতি কম থাকায় নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি ট্রেনগুলো। এক বছর ধরে প্রকল্পের অধীন আন্তনগর, মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলকারী মেইন লাইনগুলোর আমূল পরিবর্তন হয়েছে। নতুন ট্র্যাকের ক্ষেত্রে ট্রেনের গতি প্রায় ৭৫ কিলোমিটার রাখা হলেও সংস্কার হওয়া রেললাইনে গতিসীমা ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটারে উন্নীত করা হচ্ছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে পুরনো বন্ধ স্টেশন চালু করা, স্টেশনমাস্টার নিয়োগ, ইন্টারলকিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সেকশনে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহারে ট্রেনের যাত্রা ও গন্তব্যে পৌঁছানোর সময়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে। কোচ ও ইঞ্জিনের ঘাটতি শতভাগ পূরণ হলে রেলের সময়ানুবর্তিতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন তারা। রেলের বার্ষিক সময়ানুবর্তিতা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১২ সালে আন্তনগর ট্রেনের গড় সময়ানুবর্তিতা ছিল ৭০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের ৩৬ দশমিক ৮৪ এবং লোকাল ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা ছিল ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। যদিও পরের বছর রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে সময়ানুবর্তিতায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাবে গড় সময়ানুবর্তিতা ৬১ দশমিক ২০ শতাংশে নেমে আসে। ওই বছর আন্তনগর ট্রেনের ৬২ দশমিক ৪২, মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের ৩৮ এবং লোকাল ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা হয় ৮৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে ২০১৪ সালেই সময়ানুবর্তিতায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি শুরু হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট রুটের বেশ কয়েকটি ট্র্যাকের নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন, নতুন কোচ সংযোজনের কারণে গড় সময়ানুবর্তিতা ৬৬ দশমিক ১১ শতাংশে উঠে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে সময়ানুবর্তিতা বেড়ে ৮২ দশমিক ২৭ ও ২০১৬ সালে ৮৯ দশমিক ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসের গড় সময়ানুবর্তিতা রেকর্ড ৯১ দশমিক ৬৭ শতাংশে উঠে আসে।

সর্বশেষ খবর