শনিবার, ১০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
জবাবদিহিতা

ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন

মো. আছাদুজ্জামান মিয়া

ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিষ্ঠাকাল হতেই ট্রাফিক বিভাগ ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ঢাকা শহরে বর্তমানে ১০,৯১,৬৪৮টি রেজিস্টার্ড যানবাহন রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২৮০ হতে ৩০০টি নতুন নতুন গাড়ি বিদ্যমান পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা মহানগরের মানুষের জীবনযাত্রার  মান ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে এবং সে সঙ্গে জনসংখ্যা ও যানবাহনের সংখ্যাও উত্তরোত্তর বাড়ছে, কিন্তু নগরের আয়তন বা সড়ক সে তুলনায় বৃদ্ধির সুযোগ হয়নি। একটি আদর্শ শহরে যানবাহন চলাচলের জন্য ২৫% রাস্তা প্রয়োজন হলেও ঢাকা শহরে রাস্তা আছে মাত্র ৮% এর মতো। শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের প্রায় চার হাজার সদস্য ঢাকা শহরের যানজট নিরসন ও নগরবাসীর নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম, যুগোপযোগী ও কার্যকরী পরিকল্পনা নিয়ে যানজট নিরসনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে রাস্তার চিত্র পূর্বের তুলনায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অপ্রতুল এই সড়কে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক যানবাহনের চলাচল, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার, অপর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা, বিভিন্ন সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, পর্যাপ্ত গণপরিবহনের অভাব ও সর্বোপরি ট্রাফিক আইন অমান্যের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর বাস্তব প্রেক্ষাপট পর্যালোচনায় নিম্নে যানজট সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোকপাত করা হলো : ১. ইন্টারসেকশনগুলোতে অনেক বেশি যানবাহন চলাচল করে। একদিকে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে অন্য ২/৩ দিকের যান চলাচলকে বন্ধ রাখতে হয়, ফলে ইন্টারসেকশনগুলোতে যানজট লেগে থাকে। ২. বিভিন্ন ইন্টারসেকশনের গঠনগত ক্রটির (Engineering fault) কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশস্ত ফুটপাথ/রোড ডিভাইডার মূল সড়ককে সংকুচিত করে এবং অনেক ইন্টারসেকশনে লেন কমে রাস্তা সরু (Bottleneck) হয়ে যানবাহনের গতি ব্যাহত করে, ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। ৩. মহানগরীর বিদ্যালয়সমূহে ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবহনের জন্য প্রাইভেট কারের আধিক্য যানজট সৃষ্টি করে। ৪. অপরিকল্পিতভাবে আবাসিক এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল গড়ে উঠেছে কিন্তু তাদের গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা না থাকার ফলে যানজট সৃষ্টি হয়। ৫. যাত্রী ওঠানামার জন্য পর্যাপ্ত বাস-বে/বাস স্টপেজ না থাকা এবং বাসগুলো ইন্টারসেকশনের কাছাকাছি যাত্রী ওঠানামা করা যানজটের অন্যতম কারণ। ৬. ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন অফিসের সামনে, বাণিজ্যিক এলাকায় এবং রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। ৭. ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস এবং জেব্রাক্রসিং ব্যবহার না করে পথচারীদের যত্রতত্র রাস্তা পারাপারের ফলে যানজট সৃষ্টি হয় এবং দুর্ঘটনা ঘটে। ৮. আন্তঃনগর বাস টার্মিনালসমূহ ঢাকা শহরের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় টার্মিনালকে কেন্দ্র করে যানজটের সৃষ্টি হয়। ৯. সু-উচ্চ (আবাসিক ও বাণিজ্যিক) ভবনের বেইজমেন্ট অবৈধভাবে দখল/ভাড়া প্রদানের কারণে গাড়ি রাস্তায় পার্কিং করে যানজটের সৃষ্টি করে। ১০. ঢাকা মহানগরে প্রায় ৮০ হাজার রিকশা চলাচলের অনুমোদন থাকলেও তার অনেকগুণ বেশি রিকশা চলাচল করে এবং রিকশার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়াও যানজটের অন্যতম কারণ। ই-ট্রাফিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস হতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বর্তমান সরকারের ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পজ মেশিনের মাধ্যমে প্রসিকিউশন দায়ের এবং ইউ ক্যাশের মাধ্যমে জরিমানা আদায়ের প্রক্রিয়াটি সফলভাবে শুরু করেছে। ইতিপূর্বে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ট্রাফিক আইন অমান্যকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে প্রসিকিউশন দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন ব্যবস্থায় POS (Point Over Service) ডিভাইসের মাধ্যমে প্রসিকিউশন দায়ের করা হয় যা সরাসরি অনলাইন সার্ভার ডাটাবেজে এন্ট্রি হয়। কেস স্লিপ প্রিন্টপূর্বক ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারী চালক/মালিককে সঙ্গে সঙ্গে প্রদান করা হচ্ছে। ট্রাফিক অফিসে না এসে চালক/মালিক উক্ত কেস স্লিপে আরোপিত জরিমানা ইউ-ক্যাশ/ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। জরিমানা পরিশোধ করার পর সংশ্লিষ্ট মালিকের ঠিকানায় কুরিয়ারের মাধ্যমে জব্দকৃত ডকুমেন্টস পাঠানো হচ্ছে। এতে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে গাড়ি চালক/মালিকের শ্রমঘণ্টা লাঘব হওয়ার পাশাপাশি জনভোগান্তি বহুলাংশে হ্রাস পাচ্ছে এবং ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাও যানজট নিরসনে অধিক সময় কাজ করতে পারছে।  লেখক : কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ

সর্বশেষ খবর