শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিয়ম ভেঙে পদোন্নতির প্রস্তুতি নিয়ে ক্ষোভ

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে নিয়ম ভেঙে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে অন্তত ২০ লাখ টাকার বাণিজ্যের ছক কষা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি দিতে যাওয়া এই পদগুলোতে আগে থেকেই কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তারা গত পাঁচ বছর ধরে এসব পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তারপরেও বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে এই পদোন্নতি দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এজাতীয় পদোন্নতি সরকারি চাকরিবিধির পরিপন্থী।

শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৬ মে ২২৬তম বোর্ডসভায় বোর্ডের স্বার্থে দ্বিতীয় শ্রেণির ১১ কর্মকর্তাকে নিজ নিজ পদেই বেতন-ভাতা অপরিবর্তিত রেখে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে মোতাবেক ওই বছরের ১ জুলাই ১১ কর্মকর্তাকে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে পদোন্নতি দেয়। কিন্তু এটি নিয়মমাফিক হয়নি বলে বোর্ডের দুই কর্মকর্তা পরের বছরের ৭ এপ্রিল উচ্চ আদালতে রিট করেন। পরে ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আদালত এই রিট খারিজ করে দেন। এরপর ওই মাসেই ২৩২তম বোর্ডসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার রেজুলেশনের একটি সিদ্ধান্তে বলা হয়- ‘উচ্চ আদালত রিট খারিজ করে দেওয়ায় ধরে নেওয়া যায়, প্রথম শ্রেণির পদে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত ১১ কর্মকর্তার ওই পদে কাজ করার যোগ্যতা রয়েছে।’ তাই অতি দ্রুত এসব কর্মকর্তার পদোন্নতি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য নির্বাচক কমিটির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সংকট নিরসন হয়নি। এরই মধ্যে অবসরে যান দুই কর্মকর্তা। বাকি ৯ কর্মকর্তাও চলতি দায়িত্ব থেকে পদে ফিরতে পারেননি। এর মধ্যে বদল হয় বোর্ডের চেয়ারম্যানও। যোগ দেন প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ। এখন তিনি বোর্ডসভার আগের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে ওই ১১ পদে নতুন করে পদোন্নতির আয়োজন করেছেন। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম শ্রেণির ১১টি পদ পূরণে চেয়ারম্যান গত ২১ এপ্রিল বোর্ডের দ্বিতীয় শ্রেণির সব কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেন। এখন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পছন্দের প্রার্থীদের পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। আর পাঁচ বছর প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর আবার দ্বিতীয় শ্রেণিতে ফিরে যেতে হবে কয়েকজনকে। এনিয়ে তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। শুধু তাই নয়, আগের বোর্ডসভার সদস্যরাও বিষয়টি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রথম শ্রেণিতে থাকা ৯ কর্মকর্তার মধ্যে এখন অন্তত চার কর্মকর্তাকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে নামানোর চেষ্টা করছেন বোর্ড চেয়ারম্যান। এই চার কর্মকর্তার জায়গায় দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক মানিকচন্দ্র সেন, সহকারী সচিব নেসার উদ্দিন, সহকারী হিসাবরক্ষণ অফিসার শফিকুল ইসলাম ও সহকারী সচিব (ভাণ্ডার) লিটন সরকারকে পদোন্নতি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সূত্র আরও জানায়, ‘এসব কর্মকর্তার কয়েকজন বিএনপি-জামায়াতপন্থি হলেও তারা বোর্ড চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ। কেউ কেউ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত। লিটন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, ভাণ্ডারের খাতা ঠিকাদারকে ওজনে বেশি দেওয়ার। গত বছরের ১৭ জুন প্রতি ট্রাকে ৯ টনের বিপরীতে ১১ টন করে কাগজ দেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরাও পড়েছিলেন তিনি। অথচ এমন বিতর্কিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতেই তাদের সঙ্গে কয়েক লাখ টাকার চুক্তি হয়েছে।’ উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক রুবি খাতুন বলেন, ‘যোগ্যতার ভিত্তিতে আমাদের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এখন দেখছি আমাদের বাদ দিয়ে জুনিয়রদের পদোন্নতি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এটা আমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে। আমার মতো অন্য আরও কয়েকজনের একই অবস্থা।’ তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেছেন, বোর্ডসভা যাদের পদোন্নতি দিয়েছিল, তারাই অযোগ্য। তিনি যোগ্যদের পদোন্নতি দেওয়ার আয়োজন করছেন। আগামী এক মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বাণিজ্য হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি। চেয়ারম্যান বলেন, চলতি দায়িত্ব পদোন্নতির কোনো অংশ নয়। তাই তিনি নতুন করে পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। আর তিনি নির্বাচক কমিটির কেউ নন। তাই বাণিজ্যের অভিযোগ ভিত্তিহীন। বোর্ডে গত ৩০ বছরে এমন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কোনো কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়নি বলেও দাবি তার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর