সোমবার, ১৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

এবারও ভিন্ন কৌশলে লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

২২ জুন বিশেষ সার্ভিস শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

ঈদ উপলক্ষে দক্ষিণের ঘরমুখো এবং উৎসব শেষে কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের জন্য ২৮ নৌরুটে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস (ডাবল ট্রিপ) শুরু হচ্ছে ২২ জুন। ঈদের পরও এক সপ্তাহ চলবে এই বিশেষ সার্ভিস। প্রতিদিন ঢাকা-বরিশাল রুটে বিশেষ সার্ভিসে চলাচল করবে ১৩ থেকে ১৫টি বিশাল আকারের নৌযান। এদিকে ঈদ সামনে রেখে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার ফাঁদে ফেলে এবারও দক্ষিণাঞ্চলের নৌযাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

লঞ্চ মালিকরা সারা বছর যে হারে ভাড়া নেয় ঈদ এলেই তা বদলে যায় সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অজুহাতে। ঘরমুখো মানুষের অসহায়ত্তকে পুঁজি করে গত এক যুগ ধরে লঞ্চ মালিকরা এ চাতুরতার আশ্রয় নিয়ে আসছে।

 লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির স্বত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টু লঞ্চ ভাড়া বাড়ানোর কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার মধ্যেই বাড়তি ভাড়া নেবেন। সারা বছর প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার কারণে লঞ্চ মালিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে কম ভাড়া নিয়ে থাকেন। এতে অনেক সময় তাদের লোকসান গুনতে হয়। ঈদে সেই লোকসান সমন্বয় করেন। লঞ্চ মালিকদের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সারা বছর রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চগুলোতে ডেকে ২০০, সিঙ্গেল কেবিন ৯০০ এবং ডাবল কেবিন ১ হাজার ৮০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। ভিআইপি কেবিনের ভাড়া নেওয়া হয় প্রকারভেদে ৩ থেকে ৭ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারের সবশেষ নির্ধারিত লঞ্চভাড়া অনুযায়ী ডেকে যাত্রী ভাড়া ২৫৮, সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ৩৫০ ও ডাবল  কেবিন ২ হাজার ৩৫০ টাকা। তবে ভিআইপি কেবিনের ভাড়া নির্ধারণ নেই। সারা বছর লঞ্চ মালিকরা উপরোক্ত ভাড়া নিলেও ঈদের সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অজুহাত তুলে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। ঈদপূর্ব এবং পরবর্তী ১৫দিন চলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির অন্যতম পরিচালক আকতার হোসেন আকেজ জানান, ঈদের বিশেষ সার্ভিস চলাকালীন লঞ্চ মালিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেবেন। সরকার নির্ধারিত রেটের মধ্য থেকেই এবারের ঈদে ডেক ২৫০, সিঙ্গেল (এসি/ননএসি) ১ হাজার ১০০ এবং ডাবল (এসি/ননএসি) ২ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে ঈদ উপলক্ষে ৪ হাজার টাকার ভিআইপি কেবিনের ভাড়া নির্ধারিত হয়েছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।

সালমা শিপিং লাইন্সের স্বত্ব্বাধিকারী মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস জানান, সারা বছর লঞ্চ মালিকরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কমে যাত্রী পরিবহন করেন। এতে অনেক রুটে লোকসানও হয়। ঈদের সময় যাত্রী বেশি হওয়ার কারণে ওই লোকসান কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পায়। এ ছাড়া বিশেষ সার্ভিস দিতে গিয়ে ঈদের আগে ও পরে উভয় প্রান্ত থেকে খালি লঞ্চ চালাতে হয়। এজন্য লঞ্চ মালিকরা জ্বালানি তেলের বাড়তি ব্যয় পুষিয়ে নিতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার মধ্যেই ভাড়া আদায় করেন।

তবে যাত্রীদের অভিযোগ, লঞ্চ মালিকরা ঘরমুখো লাখ লাখ মানুষের অসহায়ত্তকে পুঁজি করে দুটি ঈদ উৎসবে সরকারি ভাড়ার নামে যাত্রীদের ফাঁদে ফেলেন। আর কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া হাতিয়ে নেন।

এদিকে ঈদে বরিশাল নদীবন্দরে যাত্রীদের হয়রানি এবং দুর্ভোগ লাঘবে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ। ঈদে নৌ-যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন নদীবন্দরের পরিদর্শক মো. রিয়াদ হোসেন।

সর্বশেষ খবর