বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

চালের মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ঋণের লাগাম টানার পদক্ষেপ

আলী রিয়াজ

চালের দাম বৃদ্ধির ঘটনায় এবার মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের লাগাম টেনে অবৈধ মজুদদার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সারা দেশে ধান-চালসহ খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণের সমন্বয় সীমা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এসব পণ্য মজুদের অভিযোগ পেলে ব্যাংকিং সহায়তার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মজুদ ঠেকাতে চালের আমদানি সুবিধার কথাও ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চাল আমদানিতে শূন্য মার্জিনে ঋণপত্র বা এলসি করা যাবে। দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের চিঠি পাঠিয়ে এ নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চিঠিতে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চালের স্বাভাবিক সরবরাহে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে বাজারে চালের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ ও এলসিতে আরও কঠোর নজর দিতে হবে। অবৈধ মজুদ করে কিছু ব্যবসায়ী চলের দাম বৃদ্ধি করছেন— এমন অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মজুদ ঠেকাতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে লাগাম টানার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। খাদ্যশস্য বিশেষ করে ধান ও চাল ব্যবসায়ীদের অবৈধ মজুদ না করার অঙ্গীকার দিয়ে ঋণ নিতে হবে। ব্যাংক থেকে   ঋণ নেওয়ার পর সমন্বয়ের সীমা ৪৫ থেকে ৩০ দিন করা হয়েছে। এতে যে ব্যবসায়ীরা এলসি বা ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ঋণ নেবেন তাদের কিস্তি প্রতি ৩০ দিনের মধ্যে দিতে হবে। যেটা আগে ছিল ৪৫ দিন। নতুন এই সময়সীমার মধ্যে কিস্তি বা ঋণ সমন্বয় করতে না পারলে ওই ব্যবসায়ীকে খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ধান কেনার জন্য মিল মালিক বা চাতাল মালিকদের নেওয়া ঋণের অর্থ এক মাসের মধ্যে ব্যাংকে পরিশোধ করতে হবে। এটাও আগে ছিল ৪৫ দিন।

 কিস্তি না দিয়ে যদি অবৈধ মজুদের অভিযোগ পাওয়া যায় ওই ব্যবসায়ীকে পরে ঋণ কিংবা কোনো ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়া হবে না।

চালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ সুবিধার কথাও ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চাল আমদানির জন্য এলসি মার্জিনে নতুন নীতি নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে শূন্য মার্জিনে এলসি করা যাবে। অর্থাৎ চাল আমদানিকারকদের ব্যাংকে কোনো অর্থ না থাকলেও এলসি খুলতে পারবেন। তবে আমদানির পর বাজারজাতের ৩০ দিনের মধ্যে সব অর্থ পরিশোধ করতে হবে। কোনো ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ না করলে তাকে কালো তালিকাভুক্তের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চাল বাজারের অস্থিরতা বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষণ করছে। কোথাও কোনো ব্যবসায়ী যাতে চাল মজুদ করতে না পারেন এবং সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে সেজন্য ঋণ পরিশোধের সময়সীমা কমানো হয়েছে। এতে যারা ঋণ নিয়ে ধান কিনবেন তারা ৩০ দিনের মধ্যে তা পরিশোধে বাধ্য থাকবেন। ফলে তারা চাল বাজারজাত করতে বাধ্য হবেন। তা ছাড়া আমদানিতে শূন্য মার্জিনে এলসির সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আশা করি বাজারে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

সর্বশেষ খবর