শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

নষ্ট ফ্রিজে তিন লাশ পড়ে আছে বছরের পর বছর

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

নষ্ট ফ্রিজে তিন লাশ পড়ে আছে বছরের পর বছর

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ডেথ হাউসের নষ্ট ফ্রিজে তিন লাশ পড়ে আছে বছরের পর বছর। লাশের মধ্যে দুজন নারী একজন পুরুষ। এর মধ্যে দুটি বেওয়ারিশ, একটি মামলা সংক্রান্ত। ফ্রিজ নষ্ট হওয়ায় লাশগুলো বিকৃত হয়ে গেছে। ফলে চেনার উপায় নেই কোনটি কার লাশ।

রমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডেথ হাউসে পাঁচটি ফ্রিজের চারটিই তিন বছর ধরে নষ্ট হয়ে আছে। চার চেম্বার বিশিষ্ট একটি ফ্রিজে রাখা ছিল তিন লাশ। সেটিও গত ৩১ জানুয়ারি নষ্ট হয়ে যায়। ওয়ার্ড মাস্টার মাহমুদ হাসান বলেন, নীপা রানী নামে এক যুবতীর লাশ চার বছর ধরে ফ্রিজে রাখা আছে। হস্তান্তর নিয়ে মামলা বিচারাধীন থাকায় লাশটি রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দুই বছর ধরে বেওয়ারিশ লাশ রয়েছে দুটি। এর মধ্যে একজন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের স্বজনরা এসে যাতে শনাক্ত করতে পারেন— এ কারণে লাশ দুটি রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দুজনের কোনো স্বজন আসেননি। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক মউদুদ আহমেদ বলেন, ‘গত পয়লা এপ্রিল এখানে যোগদান করেছি। কয়েকদিন আগে হিমঘরে তিনটি লাশ রাখার বিষয়টি জানতে পেরেছি। ফ্রিজগুলো নষ্ট। মামলার কারণে একটি লাশ রাখা ঠিক আছে কিন্তু বেওয়ারিশ দুটি লাশ রাখা ঠিক হয়নি। রংপুরে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম না থাকায় সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ে বেওয়ারিশ লাশ দুটির দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।’ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বামনিয়া এলাকার অক্ষয় কুমারের মেয়ে নীপা রানী (২০) প্রেমের টানে ধর্মান্তরিত হয়ে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে একই এলাকার হুমায়ুন কবীর রাজুকে (২৪) বিয়ে করেন। নীপার বাবা এ বিয়ে মেনে না নিয়ে অপহরণ মামলা করেন। পুলিশ রাজুকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। নীপাকে জোর করে বাড়িতে নিয়ে যান তার বাবা। একই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি বিষপানে আত্মহত্যা করেন নীপা। তখন থেকে তার লাশ হিমঘরে রাখা আছে। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্ত্রীর মৃত্যু খবর শুনে রাজুও বিষপানে আত্মহত্যা করেন। এরপর নীপার লাশ নিয়ে শুরু হয় দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব। নীপার বাবা মেয়ের লাশ দাবি করে আদালতে মামলা করেন। অন্যদিকে নীপার শ্বশুর জহুরুল ইসলামও পুত্রবধূর লাশ দাবি করে পাল্টা মামলা করেন। স্বজন থাকলেও মামলার কারণে নীপার লাশ হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। বেওয়ারিশ দুটি লাশের মধ্যে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল এক পুরুষ হাসপাতালে ভর্তি হন। মে মাসে মারা যান তিনি। তার নাম ঠিকানা না থাকায় লাশ হাসপাতালের ডেথ হাউসে রেখে দেওয়া হয়। একই বছরের পয়লা সেপ্টেম্বর এক নারী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার লাশও বেওয়ারিশ হিসেবে ডেথ হাউসে রাখা আছে। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ রংপুর বিভাগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এম এ বাশার বলেন, ‘পুলিশকে বললেই বেওয়ারিশ লাশ দাফনের ব্যবস্থা করত। তা না করে বছরের পর বছর লাশ ফ্রিজে রেখে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে এ গাফিলতির রহস্য উদঘাটন করা জরুরি।’

সর্বশেষ খবর