শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

অবশেষে যাত্রা শুরু হচ্ছে দেশের একমাত্র মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রের

বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের আশাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

অবশেষে চট্টগ্রাম নগরীতে যাত্রা শুরু হচ্ছে দেশের একমাত্র মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম। এটি নিয়ে রাজনীতির মাঠও উত্তপ্ত হয়েছিল। খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী লালদীঘি মাঠে সমাবেশ ডেকে নতুন এই অবতরণ কেন্দ্রের বিপরীতে পুরনো ফিশারি ঘাট চালু রাখা না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কিন্তু অবশেষে আদালত পুরনো ফিশারি ঘাটের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে কার্যত নতুন মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রটি আজ থেকে পুরোদমে চালু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভরা মৌসুমে দৈনিক অন্তত ৫০ কোটি টাকা হিসাবে বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় চট্টগ্রামের জীর্ণ পুরনো ফিশারি ঘাটটিতে। পরিবেশসম্মত নতুন অবতরণ কেন্দ্র পুরোদমে চালু হলে শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ ও সামুদ্রিক মেস্যর বাজার চাঙ্গার পাশাপাশি বিদেশেও মত্স্য রপ্তানি সম্ভব হবে বলে মনে করছেন জাতীয় মত্স্যজীবী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান মাসুক নিজাম। পুরনো মাছ বাজার লাগোয়া স্কুল-কলেজ আবাসিক এলাকার পরিবেশ পূতিগন্ধময় হয়ে ওঠায় এবং যানজট তীব্র হওয়ায় নতুন বাজার প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) এই নতুন মত্স্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করে। এদিকে পুরনো মাছ আড়তটি কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর প্রথম আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ রুবায়েত ফেরদৌসের আদালত। আদালতের নির্দেশে কোতোয়ালি থানা গতকাল দুপুরে নির্দেশনাটি টাঙিয়ে দেয়। কোতোয়ালি থানা অফিসার ইনচার্জ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আদালতে আদেশ বলবৎ রাখতে ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে।’

আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্বীকার করে মত্স্য ব্যবসায়ী সমিতির আমিনুল হক বাবুল সরকার বলেন, পুরনো বাজারে ইতিমধ্যে বিকিকিনির ওপর নিষেধাজ্ঞা নিশ্চিতের জন্য পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। তাই আজ থেকে আর পুরনো বাজারে মাছ বিক্রি হবে না। গতকাল রাতের মধ্যেই মত্স্য ব্যবসায়ীরা নতুন মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রে নিজেদের অবস্থান নেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানান সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

উল্লেখ্য, পুরনো বাজারটি এখন জীর্ণপ্রায়। এতে সমিতির আওতায় ১১২ জন আড়তদার সদস্য রয়েছেন। চুক্তির আওতায় নতুন মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রটিতে সমিতির সব ব্যবসায়ী ব্যবসার সুযোগ পাবেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৭২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সমবায় অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ জাতীয় মত্স্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড নগরীর পাথরঘাটার ইকবাল রোডের পুরনো ফিশারি বাজারটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বন্দোবস্ত নেয়। ১৯৮৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মত্স্যজীবী সমবায় সমিতির সঙ্গে সোনালি যান্ত্রিক মত্স্য সমবায় সমিতি লিমিটেড চুক্তিতে এ স্থানে ৭৪টি মত্স্য আড়ত করে। কিন্তু এটি আবাসিক এলাকা ও আশপাশে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় বাজারটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় মত্স্যজীবী সমবায় সমিতি। এ লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীর তীরে বন্দরের ৩ দশমিক ৯৭৭৫ একর ভূমিতে বাজারটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর এ ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষ জাতীয় মত্স্যজীবী সমবায় সমিতিকে বন্দোবস্ত দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ এপ্রিল জাতীয় মত্স্যজীবী সমবায়ের সঙ্গে সোনালি যান্ত্রিক মত্স্য সমবায় সমিতির চুক্তি হয়। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী নতুন মত্স্য অবতরণ কেন্দ্রে স্থানান্তর না হয়ে পুরনো বাজারে ব্যবসা করতে চাইলে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। পরে জাতীয় সমবায় সমিতি সোনালি যান্ত্রিক মত্স্য সমবায় সমিতি লিমিটেড এবং সোনালি যান্ত্রিক মত্স্য শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা করে।

সর্বশেষ খবর