বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

তরুণীদের ডেকে আনা হয় পুলিশের নির্দেশেই

সাভার প্রতিনিধি

তরুণীদের ডেকে আনা হয় পুলিশের নির্দেশেই

সাভারে দুই তরুণীকে মডেল বানানোর কথা বলে ডেকে এনে গণধর্ষণের ঘটনার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাড়ির মালিক কবির হোসেনকে ফাঁসিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা। তবে তরুণীদের চিৎকার ও মুহূর্তের মধ্যেই স্থানীয়দের জড়ো হওয়ার কারণে নিজেদের পরিকল্পনা সফল করতে পারেনি পুলিশের সোর্স ও সদস্যরা। বাড়ির মালিককে ফাঁসাতে গিয়ে ধর্ষণ মামলার আসামি হয়ে নিজেই এখন জেলহাজতে। বুধবার সকালে সাভার মডেল থানায় আটককৃত ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি লিটন আলী মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

তবে বাড়ির মালিককে ফাঁসিয়ে টাকা আদায় ও পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছুই বলতে রাজি হয়নি সাভার মডেল থানা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন লিটন আলী মণ্ডল। এ ছাড়াও এ ঘটনার সঙ্গে ব্যক্তিদের জড়িত থাকার কথাও বলেছে অন্যরা। সে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবি অফিসের পাশের লিজেন্ড কলেজ ভবন মালিক কবির হোসেনের এক নিকট আত্মীয় জানান, লিটন তাদের বাড়ির ছয় তলায় একটি মেসে ভাড়া থাকত। লিটনের কক্ষে সিটি এসবির কনস্টেবল রেজাউলসহ পুলিশের কয়েকজন কনস্টেবল মাঝে মধ্যেই আসত। তারা সেখানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক সেবন করতেন। সম্প্রতি লিটন পুলিশের কাছে গ্রেফতার হওয়ার পর বাড়ির মালিক তাকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বাড়ির মালিককে ফাঁসানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে দুই তরুণীকে ধর্ষণ করে। সাভার মডেল থানায় পুলিশের সোর্স লিটনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি এসবির কনস্টেবল রেজাউল ও ডিবি পুলিশের কনস্টেবল (মুন্সি) আফজালের পরামর্শে সে দুই তরুণীকে সাভারে ডেকে নিয়ে আসে। পরে লিজেন্ড কলেজের ২য় তলার কক্ষে তাদের আটকে রেখে রাতভর ধর্ষণ করে। ভোর রাতের দিকে লিটনকে ওই ভবন থেকে বের করে দেয় পুলিশের দুই সদস্য। এ বিষয়ে ঢাকা জেলা উত্তরের গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল মুন্সি আফজাল হোসেন বলেন, গণধর্ষণের ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে তিনিও সেখানে যান। এ ছাড়াও তিনি সোর্স লিটনকে আগে কখনো দেখেননি। সিটি এসবির কনস্টেবল রেজাউলের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির বলেন, ধর্ষণ মামলার মূল আসামি লিটন মণ্ডলকে গ্রেফতারের পর সে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) শহীদ সোহরাওয়ার্দী জানান, আসামি লিটনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। গতকাল ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতিকুল ইসলাম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।  রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলেও তিনি জানান। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান সাফিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন দুই তরুণী গণধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে যদি পুলিশের কোনো সদস্য জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।  উল্লেখ্য, ৬ জুলাই দিবাগত রাতে সাভারের ডিবি কার্যালয়ের পাশের লিজেন্ড কলেজের ভবনে গণধর্ষণের শিকার হন দুই তরুণী। মিউজিক ভিডিওর মডেল বানানোর কথা বলে তাদের মোবাইল ফোনে ডেকে এনে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর