শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

আপন লোকদের উপরে তুলতে গিয়ে ৩ জনের পদাবনতি

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে দুর্নীতিবাজদের সুদিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে নিয়ম ভেঙে বিতর্কিত ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তরা গতকাল নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। বিতর্কিতদের নিয়োগ দিতে গিয়ে বিধি লঙ্ঘন করে প্রথম শ্রেণির তিন কর্মকর্তার পদাবনতি ঘটিয়ে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বোর্ডের ইতিহাসে এই প্রথম বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিব নিজেদের লোকজনকে পদোন্নতি দিতে গিয়ে তিনজনকে নিচের পদে নামিয়ে  দিলেন। অভিযোগ উঠেছে, এ নিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বাণিজ্য হয়েছে। গতকাল বোর্ডের সর্বত্র এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। চেয়ারম্যান বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তার সরকারি মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।

গত রবিবার রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব ড. আনারুল হক প্রামাণিক স্বাক্ষরিত চিঠিতে নয়জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন নেসার উদ্দিন, মানিক চন্দ্র সেন, ওয়ালিদ হোসেন, মুঞ্জুর রহমান, লিটন সরকার, শফিকুল ইসলাম, সেলিনা পারভীন, জাহিদুর রহিম ও হোসনে আরা আরজু। এর মধ্যে শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট প্রদানের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিয়োগ পাওয়ার বড় কারণ হিসেবে অনেকে মনে করছেন চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা। ওয়ালিদ হোসেনকে ২০১১ সালে অসদাচরণের দায়ে ধিক্কার জানানো হয়েছিল। তার এসিআরএ এটি যুক্ত আছে। তবুও তিনি পদোন্নতি পেলেন।

সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ আছে সেলিনা পারভীন ও লিটন সরকারের বিরুদ্ধে। গত বছর সেলিনা ভাণ্ডারের উপসচিব এবং লিটন সহকারী সচিব থাকা অবস্থায় আর্থিক অনিয়ম করেন। তাদের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে গত বছরের ৩০ জুন পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি রহস্যজনক কারণে এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। ফলে এখন পর্যন্ত তারা সেই অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পারেননি। কিন্তু সেলিনা ও লিটনকে পদোন্নতি দিয়ে উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক করা হয়েছে। জানা গেছে, ২০১২ সালে প্রফেসর তানবিরুল আলম বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকতে বোর্ডের স্বার্থে দ্বিতীয় শ্রেণির ১১ কর্মকর্তাকে নিজ নিজ পদেই বেতন-ভাতা অপরিবর্তিত রেখে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে চলতি দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই বছরের ১ জুলাই ১১ কর্মকর্তাকে দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

কিন্তু এটি ‘নিয়মমাফিক হয়নি’ বলে বোর্ডের দুই কর্মকর্তা পরের বছর ৭ এপ্রিল উচ্চ আদালতে রিট করেন। ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আদালত এ রিট খারিজ করে দেয়।

এরপর ওই মাসেই বোর্ডের ২৩২তম সভায় সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে বলা হয় : ‘উচ্চ আদালত রিট খারিজ করে দেওয়ায় ধরে নেওয়া যায়, প্রথম শ্রেণির পদে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত ১১ কর্মকর্তার ওই পদে কাজ করার যোগ্যতা রয়েছে।’

কিন্তু সেই কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে তিনজনকে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (জেএসসি) ফরিদ হোসেন, উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ ও রেকর্ডস) রুবি এবং উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) দুরুল হোদা। ক্ষতিগ্রস্তরা মনে করেন, তাদের পদাবনতির বিষয়টি হাই কোর্টের আদেশ ও বোর্ড রেজুলেশনের পুরোপুরি লঙ্ঘন। তারা বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্তের ঘটনায় আমরা সংক্ষুব্ধ। এ ক্ষেত্রে আমরা আইনের আশ্রয় নেব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর