শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বয়োবৃদ্ধ পিতার কাঁধেই চার প্রতিবন্ধী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বয়োবৃদ্ধ পিতার কাঁধেই চার প্রতিবন্ধী

টিনের ছাউনির এক টুকরো ঘর। সামনে ছোট পরিসরের আঙিনা। এখানেই পা এলিয়ে দিয়ে বসে আছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী আবদুল মালেক (৩৪)। ঘরের মাটিতে বসে আছেন তারই আরেক ভাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নুরুল আবছার (২৬)। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া তাদের বয়োবৃদ্ধ পিতা আবদুস সালাম (৮৬) ঘরের ভিতর শুয়ে-বসেই দিনাতিপাত করছেন। এই এক ঘরেই পাঁচ প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে দীর্ঘ সংগ্রামের জীবন তার। 

চট্টগ্রাম মহানগরের পাহাড়তলী থানাধীন উত্তর সরাইপাড়া ছদু মাঝির বাড়ি এলাকার বৃদ্ধ আবদুস সালামের ৯ সন্তান। এর মধ্যে পাঁচ সন্তানই প্রতিবন্ধী। একজন শারীরিক ও চারজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। শারীরিক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মো. নুরুল ইসলাম ২০১৩ সালে মারা যান। বেঁচে থাকা অপর দুই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেন- মেহরাজ খাতুন (৩৬) ও কামরুন নাহার (২৮)। বর্তমানে বয়োবৃদ্ধ পিতার কাঁধেই ভর দিয়ে বেঁচে আছেন এই চার প্রতিবন্ধী।

পিতা আবদুস সালাম বলেন, ‘মহান আল্লাহর কী রহমত আমি জানি না। ৯ সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই প্রতিবন্ধী। প্রতিনিয়তই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অনেক কষ্টে তাদের লালন-পালন করতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার ও স্ত্রীর পরিবারের মধ্যে কেউ অন্ধ ছিল না। কিন্তু স ষ্টার কী কৃপা আমার ঘরের পাঁচ সন্তানই অন্ধ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী।’

এক পরিবারে পাঁচজন প্রতিবন্ধী প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘একই পরিবারের পাঁচজন প্রতিবন্ধী হওয়ার ঘটনাটি আমাদের জানা ছিল না। প্রাথমিকভাবে তাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কিছু নমুনা পরীক্ষা করা হবে। সেখানে যদি চূড়ান্ত ফল পাওয়া যায় সে অনুযায়ী রোগের ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। যদি চবির পরীক্ষায় চূড়ান্ত রিপোর্ট না আসে তবে সুইজারল্যান্ড কিংবা সিঙ্গাপুরে নমুনা পাঠাতে হবে।’

গতকাল দুপুরে সরেজমিন সরাইপাড়ায় তাদের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী চার সন্তান নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছেন তাদের পিতা। সমাজসেবার কিছু ভাতা ও আত্মীয়-স্বজনের আর্থিক সহায়তাই তাদের চলার মাধ্যম। অভাব-অনটনে দিন পার করলেও স্বস্তিতে নেই এই পিতা। নিজের অসহায়ত্বের কথা বর্ণনা দিয়ে পিতা আবদুস সালাম বলেন, কত কষ্টে তাদের নিয়ে বেঁচে আছি তা মুখে বর্ণনা করার মতো ভাষা আমার নেই।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর