বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডের দুই পাশে ৬-৭ বছর আগে নির্মিত পুরনো ড্রেনের ওপর (ফুটপাথ) নতুন করে টাইলস স্থাপন করার কাজ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। বর্ষা-কাদায় ড্রেনের ওপর জন্মানো শেওলা-ময়লা পরিষ্কার না করে কোনোমতে বালু দিয়ে তার ওপর টাইলস স্থাপন করার পরপরই আবার সেগুলো উঠে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, যেনতেনভাবে কাজ করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে ফন্দি করেছে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ ও ঠিকাদার। যদিও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান। নগরীর সদর রোডের সংযোগস্থল থেকে শীতলাখোলা পর্যন্ত কালীবাড়ি রোডের দুই পাশে কোটি টাকা ব্যয়ে বক্স ড্রেন নির্মাণ কাজ করা হয় সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের সময়ে। দীর্ঘদিনেও সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ওই ড্রেনের উপরিভাগের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। টানা বৃষ্টিতে কোথাও আবার শেওলা জন্মেছে। ড্রেনের উপরিভাগ (স্লাব) সংস্কার না করে শেওলা ও ময়লা-আবর্জনা রেখেই গত ১১ আগস্ট থেকে কালীবাড়ি রোডের দুই পাশের ড্রেনের ওপর টাইলস স্থাপনের কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন। ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরনো ড্রেনের ওপর টাইলস স্থাপনের কাজ করছে মুন্না এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যেনতেনভাবে ময়লা-কাদা-শেওলা পরিষ্কার না করেই তার ওপর টাইলস স্থাপন করায় মুহূর্তের মধ্যে তা উঠে যাচ্ছে। অভিযোগ ঈদের আগে একটি অসাধু চক্র অর্থ হাতিয়ে নিতে এই কাজ শুরু করেছে। সরেজমিন দেখা যায়, কালীবাড়ি রোডের দুই পাশে ৬-৭ বছর আগের পুরনো শেওলা পড়া, ভাঙা ড্রেনের ওপর টাইলস স্থাপনের কাজ চলছে। ভাঙা ড্রেন সংস্কার না করে শেওলার ওপর বসানো হচ্ছে টাইলস। সিমেন্ট কম দিয়ে কোনোমতে টাইলস দিয়ে ঢেকে দেওয়ার কাজ চলছে। বৃষ্টি-কাদার মধ্যে কাজ করায় পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনেক স্থানের টাইলস ভেঙে গেছে, আবার কোথাও উঠে গেছে। টাইলস স্থাপন কাজের শ্রমিক মো. বাদল জানান, গত সপ্তাহে তারা কাজ শুরু করেছেন। এর আগে একই সড়কের পাশে ড্রেনে দেড় বছর আগে কিছু কাজ করেছিলেন। বরাদ্দ না থাকায় সে সময় কাজ বন্ধ রাখেন ঠিকাদার। গত শুক্রবার থেকে ফের কাজ শুরু হয়। সদর রোডের সংযোগস্থল কালীবাড়ি রোড শীতলাখোলার মোড় পর্যন্ত ড্রেনে টাইলস লাগানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। কালীবাড়ি রোডের বাসিন্দা মো. শাহীন জানান, এই এলাকায় ড্রেন নির্মাণ হয়েছে সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের আমলে। ৬-৭ বছরে অনেক স্থানে ড্রেন ভেঙে গেছে। বর্ষায় ড্রেনগুলোর ওপরে ও পাশে শেওলা জমে গেছে। পুরনো ড্রেন সংস্কার না করে কাদা-পানি ও শেওলার ওপর টাইলস বসানোর মাধ্যমে অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই হবে না বলে তিনি মনে করেন। স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মো. পলাশ জানান, সিটি করপোরেশন তাদের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী কাজ করছে। এই কাজ তদারকি করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তা না হলে বর্ষায় পুরনো ড্রেনের ওপর টাইলস স্থাপন কার স্বার্থে। ওই রোডের সরকারি বরিশাল কলেজ এলাকার বাসিন্দা মেজবাউদ্দিন জানান, যেনতেনভাবে কাজ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। নামমাত্র সিমেন্ট দিয়ে শুধু বালুর ওপর টাইলসগুলো বসানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত সিমেন্ট না দেওয়া এবং বর্ষার পানিতে স্থাপনের পরপরই অনেক স্থানের টাইলস উঠে গেছে। বরিশাল নগর সৌন্দর্য রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, অপরিকল্পিত ড্রেনের কারণে নগরবাসী প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধায় পড়ছে। জলাবদ্ধতা কমানোর কোনো উদ্যোগ না নিয়ে পুরনো ড্রেনে টাইলস স্থাপনের কাজ হাস্যকর এবং উদ্দেশ্যমূলক। সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির জানান, কালীবাড়ী রোডের দুই পাশে ড্রেন কাম ফুটপাথের কাজ হচ্ছে সাধারণ (নিজস্ব অর্থায়ন) ফান্ডের অর্থে। এই প্রকল্পে বরাদ্দ না থাকায় এর আগে একবার কাজ বন্ধ ছিল। বর্তমানে শুরু হওয়া কাজ নিয়ে সমস্যার কথা শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অর্থ ভাগবাটোয়ারা কিংবা অপচয়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে তার দাবি। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, বর্ষায় পুরনো ড্রেনের ওপর টাইলস স্থাপন করার কথা নয়। এরকম কোনো কাজ শুরুর আগে তার জানার কথা। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। কিছু ঠিকাদার অতি উৎসাহী হয়ে কাজ করে বিল তোলার চেষ্টা করেন। তিনি এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। সরেজমিন পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামালও।