শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

হাইড্রোলিক হর্নের কবলে চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

হাইড্রোলিক হর্নের কবলে চট্টগ্রাম

হৃদরোগে আক্রান্ত আরেফা সিদ্দিকা চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বের হচ্ছিলেন। হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করছেন গাড়ির জন্য। এমন সময় একটি কারের  উত্কট উচ্চ আওয়াজের হাইড্রোলিক হর্নে রোগীটি তাত্ক্ষণিক মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে সুস্থ করা হয়। এভাবে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব হর্ন কেবল সাধারণ সড়ক নয়, নীরব এলাকা— হাসপাতাল, ক্লিনিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আবাসিক এলাকায়ও চলছে। দিনের বেলায় তো বটেই, রাতেও চলছে এর ব্যবহার। হাইড্রোলিক হর্নের কবলে পড়েছে চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘নগরে সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হাইড্রোলিক হর্নসহ নানা শব্দদূষণ হচ্ছে। তবে হাইড্রোলিক হর্নের কারণে শ্রবণশক্তি লোপ পাওয়া, হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যাওয়া, স্নায়ুতে বিরূপ প্রভাব পড়া, স্থায়ী বধির হওয়ার সম্ভাবনা থাকা, কানে ভু ভু করা এবং মাথা ব্যথা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকা জরুরি।’ সিএমপির সহকারী কমিশনার (যানবাহন-উত্তর) সুজায়েত ইসলাম বলেন, ২২ তারিখ থেকে হাইড্রোলিক হর্ন, সড়কে প্রতিবন্ধকতা এবং অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চলছে। তবে নিষিদ্ধ হাইড্রোলিক হর্নের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর। এর বিরুদ্ধে মামলা, হর্ন জব্দসহ নানাভাবে কঠোর অবস্থানে আছি।’ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) মো. মহিউদ্দিন বলেন, গত চারদিনের অভিযানে বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে মোট ২৩৯৭টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ১৩১৭টি মামলাই বিশেষ অভিযান তথা হাইড্রোলিক হর্ন, সড়কে প্রতিবন্ধকতা এবং অবৈধ পার্কিংয়ের। তা ছাড়া অভিযানে নানা প্রকারের ২১৪টি গাড়িও জব্দ করা হয়েছে। অভিযান ২৬ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।’ ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রাতে একদল তরুণ একযোগে হাইড্রোলিকযুক্ত ৮-১০টি মোটরসাইকেলে কখনো দেখা যায়, আবার কয়েকটি প্রাইভেট কার একযোগে প্রতিযোগিতা করতেও দেখা যায়। বিশেষ করে মোটরসাইকেলগুলো চালানোর সময় এক প্রকারের আতঙ্ক তৈরি হয়।  হাইড্রোলিক হর্ন যুক্ত এক মোটরসাইকেলের চালক বলেন, ‘হর্নটি নিষিদ্ধ আমি জানি। তবুও চালাই। পুলিশ মাঝে মাঝে আটক করে। তবে উপরে তদবির করে আমরা ছাড়া পাই।’ শব্দদূষণ বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী নীরব এলাকা অর্থাৎ হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত আছে এমন এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবেলের চেয়ে বেশি শব্দ করা যাবে না। আবাসিক এলাকার ক্ষেত্রে এই মাত্রা ৫৫ ও ৪৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় ৭০ ও ৬০ ডেসিবেল। কিন্তু বর্তমানে এর কয়েকগুণ বেশি মাত্রার শব্দদূষণ হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানমাত্রা অনুযায়ী সাধারণভাবে ৪০ থেকে ৪৫ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ ভালো শুনতে পায় মানুষ। এর চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তিসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।

সর্বশেষ খবর