রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
অভিনব প্রতারণা

ব্যাংক কর্মকর্তার খোয়া গেল ৫৫ লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার একটি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মাসুদ রানা (ছদ্মনাম)। ব্যাংকে বন্ধকিকৃত জমি বিক্রির জন্য পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেন। সেই বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে একদল পেশাদার প্রতারক ফাঁদ পাতে। প্রথমে ফারুক পরিচয়ে মাসুদের সঙ্গে ওই জমির বিষয়ে কথা বলে। তিনি নিজেকে তার মালিকের এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দেন ও তার মালিকের সঙ্গে কথা বলার জন্য নিকুঞ্জ অফিসের ঠিকানা দেন। মাসুদ জমির কাগজপত্র নিয়ে ওই ঠিকানায় যান। সেখানে এজেন্ট ফারুক, তার মালিক আমজাদ হোসেন, রাচি ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ম্যানেজার শামসুল হকের সঙ্গে মাসুদের পরিচয় হয়।

তাদের সব পরিচয়ই ভুয়া। বিভিন্ন দিনে একই স্থানে তাদের আলোচনার পরে এ জমি কেনার জন্য তারা একমত হন। এরই মাঝে তারা মাসুদকে ফলো করে দেখতে পান তিনি অত্যন্ত ধর্মভীরু। এটাকে পুঁজি করে তারা ফাঁদ পাতেন। রাচি ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ম্যানেজার শামসুল হক জানান, তার ইন্ডিয়ান বস অত্যন্ত খারাপ ও মুসলমানদের সে ঘৃণা করে। বাবরী মসজিদ ভাঙার পেছনে তার ফান্ডিং ছিল। এমনকি তিনি তার মুসলমান ড্রাইভারের মেয়েকেও ধর্ষণ করেছেন। সুতরাং মুসলমান হিসেবে তারা তাকে একটি শিক্ষা দিতে চান। রাচি ইন্টারন্যাশনালের কথিত ইন্ডিয়ান মালিকের একটি দুর্বলতা হলো যে তিনি, ৩ কার্ড (এক ধরনের জুয়া) খেলতে পছন্দ করেন ও শামসুল হক তার থেকেও বড় খেলোয়াড়। শামসুল হক তাদের সামনেই দেখান যে তিনি যেভাবেই তাস সাফল করুক না কেন সবসময় তিনিই জিতবেন। সুতরাং তার মালিকের সঙ্গে জুয়া খেলে অন্তত ৫-৭ কোটি টাকা তারা নিয়ে নেবেন ও মুসলমানের বাচ্চা হিসেবে তারা এর ১৫% মসজিদ মাদ্রাসায় দান করে দেবেন। বাকিটা তারা ভাগ করে নেবেন। এরপর হাজির হন তথাকথিত ইন্ডিয়ার বস এবং স্বাভাবিকভাবেই তিনি বাংলা বলতে পারেন না, কিন্তু অনর্গল ইংরেজিতে বলতে পারেন। তারা তাকে জুয়া খেলতে রাজি করান ও তাকে জুয়ায় ৫ কোটি টাকার বিডে হারিয়ে দেন। কিন্তু এ জুয়ার একটি নিয়ম হলো যে, যে এমাউন্টে বিড করবে তা তার সঙ্গে ক্যাশ থাকতে হবে। সুতরাং ইন্ডিয়ান বস বলে তোমরা তোমাদের ৫ কোটি চাইলে আমাকে আগে তোমাদের ৫ কোটি টাকা দেখাও। একদিনের মধ্যে না দেখাতে পারলে টাকা পাবে না। তখন তারা শো করার জন্য এ টাকা আনার দায়িত্ব ভাগ করে নেন যে, কে কত নিয়ে আসবেন। বিভিন্ন জন বিভিন্ন এমাউন্ট নিলে ম্যানেজারের ভাগে ৫৫ লাখ টাকা পড়ে। পরের দিন ৫৫ লাখ টাকা নিয়ে ম্যানেজারকে ঢাকার একটি স্বনামধন্য পাঁচ তারকা হোটেলে আসতে বলেন যেখানে তার বস থাকেন। ম্যানেজার সেখানে যান। অন্যরাও বড় বড় ব্যাগ নিয়ে আসেন।

বলেন, তারাও টাকা ম্যানেজ করে ফেলেছেন। এবার গোনার পালা। এ গোনার ভিতরেই যে যেভাবে পারে সেভাবে হোটেল থেকে বের হয়ে যান। ম্যানেজার বুঝতে পারেন তিনি ভয়াবহ রকমের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

ব্যাংক ম্যানেজার মাসুদ বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমে দেখতে পান, আসামিদের সব তথ্যই ভুয়া। অনুসন্ধানে এ ঘটনায় জড়িত রেজাউল করিম ওরফে সামসুল হক এবং আসাদুজ্জামান ওরফে খোকন ওরফে আমজাদ হোসেনকে শুক্রবার রাজধানী থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও দুটি প্রিমিও প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়। তারা কমপক্ষে ৫০টি এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।

সিআইডির এএসপি (মিডিয়া) শারমিন জাহান জানান, আসামি রেজাউলের বাড়ি গাইবান্ধা সদরের হাট লক্ষ্মীপুর গ্রামে। এসএসসি পাস করা রেজাউল ২০১০ সালে ঢাকায় এসে ৩ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে গার্মেন্টে চাকরি নেন। পরবর্তীতে এ চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে কয়েক বছরের মধ্যে কোটিপতি বনে যান। এ ছাড়া আসামি আসাদুজ্জামানের বাড়ি ঝিনাইদহ সদরের বাদালীডাঙ্গা গ্রামে। ৭ম শ্রেণি পাস করা আসাদুজ্জামান ২০০৭ সালে বিদেশ যাওয়ার জন্য ঢাকায় আসেন। পূর্বে থেকেই তিনি জুয়া খেলায় অভিজ্ঞ হওয়ায় জুয়ার মাধ্যমে প্রতারণার জাল ছড়িয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হন।

সর্বশেষ খবর