বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

নগদ লেনদেন কমানোর চিন্তা

জাল টাকা রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাল টাকা রোধে নগদ অর্থের লেনদেন কমাতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ব্যাংকিং চ্যানেলে সব ধরনের লেনদেন করতে সব পশুর হাটে ২৪ ঘণ্টা ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব হাটে অস্থায়ী ভিত্তিতে এটিএম বুথ স্থাপন করা হবে। গ্রাহক ও ব্যবসায়ীরা গ্রামে গিয়েও যাতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারেন সেজন্য ব্যাংকগুলোকে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর কড়াকড়ি শিথিল করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন সিলিং বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। শুধু ঈদকেন্দ্রিক নয় বড় ধরনের সব লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলে নিয়ে আসতে চাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০০০ ও ৫০০ টাকার বান্ডিলে দুইটি/একটি নোট জাল ধরা পড়ছে। ঈদে টাকার লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ায় জালিয়াতির ঘটনার বাড়ছে। জাল টাকা রোধে সব ব্যাংককে চিঠি দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাজধানীসহ দেশের সব ব্যাংক শাখায় জাল টাকা চেনার উপায় ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভিডিও প্রদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়। একেকটি ব্যাংক শাখা তাদের নিজ উদ্যোগে নির্ধারিত পয়েন্টে এ ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিভিন্ন মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে একেকটি ব্যাংক শাখা তাদের নিজ উদ্যোগে এই ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করবে। এছাড়া দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোকে প্রান্তিক পর্যায়ে এটিএম বুথ স্থাপন করাসহ সব জায়গায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও টাকা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশের সিটি করপোরেশন, পৌরসভার অনুমোদিত কোরবানির পশুর হাটে জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে। প্রত্যেক হাটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও বিরতিহীনভাবে জালনোট যাচাই ও ২৪ ঘণ্টা ব্যাংকিং সেবা দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এটিএম বুথে টাকার সরবরাহ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব কার্ড ইস্যু ও লেনদেনে পারসোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর পিনভিত্তিক করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রি ও ডাটা সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফাইড হতে হবে। মেশিনে কার্ড আটকে গেলে সাত দিনের মধ্যে গ্রাহককে কার্ড ইস্যু করে দিতে হবে। কার্ডে লেনদেনে কোনো ধরনের বাড়তি চার্জ আরোপ না করে দ্রুত ও সহজ করার উদ্যোগ নিতে হবে। এটিএম বুথের ভিডিও তিন মাস অনলাইনে রাখতে হবে। যাতে গ্রাহক চাইলেই এই চিত্র দেখতে পান। এক বছর পর্যন্ত এই তথ্য আর্কাইভ করতে হবে। কোনো এটিএম বুথ ৭২ ঘণ্টার বেশি অচল রাখা যাবে না। প্রতারণা-জালিয়াতি রোধে পিওএস লেনদেনে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে লেনদেন অনুমোদন দিতে হবে। কোনো ধরনের জালিয়াতির শিকার হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দায় নিতে হবে।

নগদ লেনদেনের পরিমাণ কমাতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কড়াকড়ি শিথিল করা হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সর্বোচ্চ সিলিং নির্ধারণেও নতুন সিদ্ধান্ত আসছে। বর্তমানে এক দিনে দুইবারের বেশি সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকার বেশি পাঠানো (ক্যাশ-ইন) যায় না মোবাইল চ্যানেলে। একজন গ্রাহক মাসে ২০ বারের বেশি লেনদেন করতে পারেন না। গত জানুয়ারি মাসে এই নীতিমালা জারি করার আগে গ্রাহক দিনে পাঁচবার জমা (ক্যাশ-ইন) ও তিনবার উত্তোলন (ক্যাশ-আউট) করতে পারতেন। এক্ষেত্রে গ্রাহক প্রতিদিন নগদ ২৫ হাজার টাকা জমা ও উত্তোলন এবং মাসে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ জমা ও উত্তোলন করতে পারতেন। যা এখন মাত্র ৫০ হাজার টাকা। এই নীতিমালার কারণে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক গ্রাহক গ্রামে টাকা পাঠাতে পারেননি। এসব বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নীতিমালায় পরিবর্তন আনছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন করা ঝুঁকিমুক্ত। বড় সব ধরনের লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলে করার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। মোবাইল ব্যাংকিং মূল ব্যাংকিংয়ে অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে এই মাধ্যমে গ্রাহকরা অনেক লেনদেন করেন। কিছু জটিলতার কারণে আমরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ আউট-ইন করার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছিলাম। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। দ্রুত এসব কড়াকড়ি উঠিয়ে নেওয়া হবে। আমরা ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দ্রুত সেটা করা হবে।

সর্বশেষ খবর