রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ

চলতি বছরের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক)  আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। এরই মধ্যে নির্বাচনী মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে। নগরীর  প্রধান সড়কসহ অলিগলি ছেয়ে গেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও পোস্টারে। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের এক ডজন, বিএনপির জনা ছয়েক নেতা দলীয় মনোনয়নের জন্য চেষ্টা তদবির করছেন। নির্বাচন দলগত হবে বলে সব প্রার্থীই দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন কে পাবেন তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা থাকলেও জাতীয় পার্টি অনেকটা নির্ভার। দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে আগাম ঘোষণা দিয়েছেন। গত রবিবার তিনদিনের সফরে রংপুরে এসে এরশাদ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে সমাবেশ করে মোস্তফার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের নেতারা পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ করে ভোটারদের মধ্যে নৌকা প্রতীক সংবলিত লিফলেট বিতরণ করছেন। অনেকেই আবার সমর্থকদের নিয়ে নগরীতে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ও মিছিল করছেন। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন হয়। প্রথম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। ঝন্টু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও পরামর্শে সিটি করপোরেশন এলাকায় অপ্রত্যাশিত উন্নয়ন করেছি। মনোনয়ন চেয়েছি। আশা করি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী আমাকেই মনোনয়ন দেবেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতারা হলেন, দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ব্যবসায়ী নেতা আবুল কাশেম, আইনবিষয়ক সম্পাদক রথীশ চন্দ্র বাবু সোনা, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সফিউর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, প্রচার সম্পাদক ও মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন, রাশেক রহমান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আতাউর জামান বাবু এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সদস্য সাবেক আমলা জয়নুল আবেদীন সরকার। এদের মধ্যে অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে চার জনের। বর্তমান মেয়র ঝন্টু এর আগে জাতীয় সংসদ সদস্য,  উপজেলা চেয়ারম্যান এবং রংপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং রংপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করলেও জিততে পারেননি। আতাউর জামান বাবু সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে এবং সফিউর রহমান সফি সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিউর রহমান সফি বলেন, গত নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ছিল না। এবার দলীয় প্রতীক পেলে জয়ী হবো। সেভাবে মাঠও তৈরি করেছি। তার প্রতি দলের হাইকমান্ডের সুদৃষ্টি আছে বলে দাবি করেন তিনি। 

জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নাম ঘোষণার পর দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা শুরু করায় এ কে এম আবদুর রউফ মানিককে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং এরশাদের আপন ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফকে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব পদ থেকে বহিষ্কার করেন তিনি। আসিফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তবে মানিক নৌকা প্রতীক পেতে লবিং চালাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি আওয়ামী সমর্থক গোষ্ঠীর ব্যানারে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদ জয়ের ছবির সঙ্গে নিজের ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড  লাগিয়েছেন। তবে এ বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না স্থানীয় আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক তৌহিদুর রহমান টুটুল বলেন, আওয়ামী সমর্থক গোষ্ঠী বলে দলের কোনো সহযোগী সংগঠন নেই। মানিক আওয়ামী লীগ তো দূরের কথা কখনো ছাত্রলীগের রাজনীতিও করেননি। নৌকার মনোনয়নের আশায় তিনি নিজেই আওয়ামী সমর্থক গোষ্ঠী নাম দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুর রউফ মানিক বলেন, নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করছি। এখনো ফাইনাল হয়নি। আওয়ামী লীগের একটি অংশ আমাকে সমর্থন দিচ্ছে। তারাই আওয়ামী সমর্থক গোষ্ঠীর ব্যানারে প্রচারণা চালাচ্ছে।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান বাদল, মহানগর সভাপতি মোজাফফর হোসেন, সহসভাপতি কাওসার জামান বাবলা ও মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু। এদের মধ্যে গত নির্বাচনে কাওসার জামান বাবলা মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পঞ্চম স্থানে ছিলেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ বলেন, দলের জন্য অনেক হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। আশা করি দল মূল্যায়ন করবে।  

তিন বড় দল ছাড়াও মেয়র পদে ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সদস্য কাজী মাজিরুল ইসলাম লিটন, জেলা বাসদের সমন্বয়ক আবদুল কুদ্দুসও প্রার্থী হতে পারেন। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর