শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই দিনে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, টেকনাফ ও উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

আন্তর্জাতিক সব চাপ ও আইন উপেক্ষা করে মিয়ানমার সেনারা সে দেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। যারা ঘরবাড়ি ছেড়ে মিয়ানমারের বুছিদং ও রাছিদংয়ের পাহাড়ের গহীনে অবস্থান নিয়েছে, খাদ্য সংকটে পড়ে তাদের অবস্থা শোচনীয় বলে জানান পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। গত দুই দিনে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ  হয়ে আরো অন্তত ৫ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিপরীতে মিয়ানমারের নাইক্যনদিয়ায় এপারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। টেকনাফ থেকে নাফ নদের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তে কোনো নৌযান যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছু কিছু রোহিঙ্গা বিভিন্ন কৌশলে নাফ নদ পার হয়ে এপারে আসছে। এ স্রোত কবে থামবে কেউ জানে না। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জেটীঘাট গিয়ে দেখা যায়, ওপারে নাইক্যনদিয়ায় আটকে পড়া রোহিঙ্গারা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছে। দিনে দিনে এ সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। তারা পলিথিন ও খড়কুটোর তাবু টানিয়ে কোনো রকমে রোদ-বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন যারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে, তারা ১৫ থেকে ২০ দিন অনাহারে-অর্ধাহারে থেকে খাদ্য সংকটে পড়েই এপারে চলে আসছে। অনেকদিন আগেই তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিজিপি। উদ্বাস্তু হয়ে এ পাহাড় ও পাহাড়ে থেকে আর কোন পথ না দেখেই বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটে আসতে বাধ্য হচ্ছে—এমনই জানালেন বুছিদংয়ের রোহিঙ্গা মোসলেম উদ্দিন। তিনি বলেন, ৮দিন ধরে হাটতে হাটতে নাইক্যনদিয়ায় এসে পৌঁছেছি ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে। খেয়ে না খেয়ে আর সহ্য করতে পারছি না বলে চলে এসেছি। গাছের পাতা ও চেনা-অচেনা শাকপাতাও খেতে হয়েছে। বাড়িঘর হারানোর পর একটি পাহাড়ের খাদে অবস্থান নিয়েছিলাম আরো কয়েকজনের সঙ্গে।

দুইদিন আগে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, দেশ ত্যাগ করে পালিয়ে আসার সময়ও রোহিঙ্গারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ভিটেমাটির মায়া ছেড়ে যখন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য যাত্রা শুরু করেন রোহিঙ্গারা, তখন মিয়ানমার সেনা সদস্য ও সে দেশের বর্ডার গার্ড পুলিশ এবং মগ-মুরংদের হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় তাদের কাছে থাকা নগদ টাকাপয়সা ও গহনা কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর