রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কবর থেকে কঙ্কাল চুরি বাণিজ্য

ক্রেতা মেডিকেল শিক্ষার্থীরা

মাহবুব মমতাজী

দেশের বিভিন্ন স্থানের কবর থেকে দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের কঙ্কাল চুরি হচ্ছে। আর সেগুলো কার্টনে করে ঢাকায় এনে বিক্রি করা হচ্ছে হাজার হাজার টাকায়। এসব কঙ্কালের ক্রেতা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এভাবে কঙ্কাল ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছর কামরুজ্জামান ও তার কর্মচারী শাহীনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। মানুষের কঙ্কাল সংগ্রহ ও বিক্রি করাই ছিল কামরুজ্জামানের কাজ। হাড় ছাড়া শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গও বিক্রি করতেন তিনি। একটি পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল প্রায় ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কঙ্কাল সংগ্রহের কথা জানান। তারা এগুলো কবর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহায়তায় নিয়ে আসতেন। জানা গেছে, চলতি বছর একজনকে পলাতক দেখিয়ে ওই দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে কাফরুল থানা পুলিশ।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীর কাফরুলের ইটখোলা এলাকার একটি ছয়তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় কামরুজ্জামানের ভাড়া করা ফ্ল্যাট থেকে গত বছরের ৫ নভেম্বর বিকালে মানুষের ৩৫টি কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। ইলিয়াস সাইফুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন বাড়ির ওই ফ্ল্যাট থেকে কামরুজ্জামান ও শাহীনকে আটক করে কাফরুল থানা-পুলিশ। প্রাথমিকভাবে তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় কামরুজ্জামান ও শাহীনের কাছ থেকে কঙ্কাল ব্যবসা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পায় পুলিশ। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ছাত্রদের কাছে বিক্রির জন্য কঙ্কালগুলো সংগ্রহ করেছিলেন কামরুজ্জামান। এমনকি তিনি মেডিকেল কলেজ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কঙ্কাল কিনে নিতেন। সেগুলো আবার ভর্তি হওয়া নতুন শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করতেন। তিনি একটি কঙ্কাল ২৫-৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। এ ব্যাপারে তদন্ত শেষে চলতি বছরের ৩ জুলাই আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। চার্জশিটে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ইন্টার্নি চিকিৎসক তন্ময়কে পলাতক দেখানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাফরুলের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া বেশির ভাগ কঙ্কালই ছিল পুরনো। এর সঙ্গে বেশ কিছু নতুন কঙ্কালও ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কঙ্কাল সংগ্রহ করে কার্টনে করে ওই ফ্ল্যাটে আনা হতো। এখানেই কঙ্কাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বিক্রি করতেন কামরুজ্জামান। কঙ্কাল থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে যায় ভবনের অন্যান্য ফ্ল্যাটে। এরপরই খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। নিজেকে নুরুজ্জামান পরিচয় দিয়ে ইলিয়াস সাইফুল্লাহর ফ্ল্যাটটি এক মাস আগে ভাড়া নিয়েছিলেন কামরুজ্জামান। এ ছাড়া বাড়ির মালিকের কাছে তিনি নিজেকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক পরিচয় দিয়েছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর