শিরোনাম
বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে আমাদের অস্তিত্ব জড়িত : প্রধানমন্ত্রী

সংসদ অধিবেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে আমাদের অস্তিত্ব ও ইতিহাস সবই জড়িত। এই ভাষণে বাংলার মানুষ উজ্জীবিত হয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর এই ভাষণ প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। যে ভাষণ পাকিস্তানিরাও বন্ধ করতে পারেনি, প্রচার করতে বাধ্য হয়েছিল, পাকিস্তানিদের প্রেতাত্মারা সে ভাষণ বন্ধ করে দেয়। তারা বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলতে চেয়েছে। কিন্তু ইতিহাস সত্যকে তুলে ধরে। আজ ইতিহাস সেটাই তুলে ধরেছে। বিশ্বের ১২টি ভাষায় এই ভাষণ অনূদিত হয়েছে। সারা বিশ্বে যারা নিপীড়িত ও অবহেলিত এই ভাষণ আজও তাদের শক্তি ও প্রেরণার অবলম্বন। শোষিত-নিপীড়িত মানুষের প্রেরণার উৎস।

জাতিসংঘের বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে দেওয়া বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণটি স্বীকৃতি পাওয়ায় সংসদে আনীত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদের তৃতীয় দিনে কার্যপ্রণালির ১৪৭ (১) বিধিতে এ বিষয়ে সাধারণ আলোচনার প্রস্তাব আনেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। প্রস্তাবে বলা হয়, সংসদের অভিমত এই যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দেশ ও জাতির সঙ্গে আমরা গর্বিত এবং এ জন্য ইউনেস্কোসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জাতীয় সংসদ ধন্যবাদ জানাচ্ছে। বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ৭ মার্চের  ভাষণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। এতে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, স্বতন্ত্র সদস্যসহ সরকারদলীয় ৫৭ জন এমপি আলোচনায় অংশ নেন। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন বাঙালি এই ভাষণ দিয়েছেন। সারা বিশ্বে আজ তা সমাদৃত। এই ভাষণ আজ সারা বিশ্বের শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাষণ। সেই ভাষণ বিশ্বের নিপীড়ন নির্যাতিত মানুষের অনুপ্রেরণা। পৃথিবীর ১০০টি ভাষণের মধ্যে জাতির পিতার এই ভাষণ ঠাঁই পেয়েছে। আড়াই হাজার বছরের ভাষণ নিয়ে সংকলিত গ্রন্থে এই ভাষণ স্থান পেয়েছে। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ দেশে তা নিষিদ্ধ করা  হয়েছিল। তারপরও বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ ৪৬ বছর ধরে এতবার বেজেছে যা হিসাব করলে অঙ্কে কুলাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ভাষণের আগে বঙ্গবন্ধু ও তার মাতার মধ্যে কথোপকথনের স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি বেগম ফজিলাতুন নেছা কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে সাহস জুগিয়েছিলেন তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সেই সময় কী চেয়েছিলেন স্পষ্ট করে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। তার (বঙ্গবন্ধু) মনের যে ব্যথা, সেটা কিসের জন্য? সেটা ছিল বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পাকিস্তানি বাহিনী বাধা দেওয়ার। সেটাই তিনি তুলে ধরতে চেয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় ৭ মার্চের ভাষণ ছিল চরম মুহূর্ত। সেদিন তিনি শুধু স্বাধীনতার ঘোষণাই দেননি, বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেছেন। তিনি যেমন একদিকে ইতিহাস তুলে ধরেছেন অন্যদিকে কী কী করতে হবে সেটাও বলেছেন। অসহযোগ আন্দোলনে গরিব মানুষের যাতে কষ্ট না হয় এ জন্য হরতালে কী কী শিথিল থাকবে তাও বলেছেন। তার অবর্তমানে তার নির্দেশগুলো যেন মানা হয় সেই নির্দেশ দিয়ে গেছেন তিনি। তার এই নির্দেশ মেনে বাঙালি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধু বিশ্বসভায় আরেকবার আমাদের গৌরবান্বিত করেছেন : রওশন : বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্বীকৃতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বিশ্বসভায় আরও একবার আমাদের গৌরবান্বিত করেছেন। তিনি স্বাধীনতা এনে এ জাতিকে গৌরবান্বিত করেছিলেন। তার জন্যই আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। পতাকা পেয়েছি।

কোনো ভাষণ এতবার উচ্চারিত হয়নি— তোফায়েল : বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, পৃথিবীর অন্য কোনো ভাষণ এতবার উচ্চারিত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ আজ তা প্রমাণিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অলিখিত ১৮ মিনিটের  এ ভাষণ বাঙালি জাতিকে জাতীয় মুক্তির মোহনায় দাঁড় করিয়েছিল। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধুর দৃপ্ত কণ্ঠের ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ কেবল বাঙালি জাতিকে আলোড়িত করেনি বরং বিশ্ব বিবেককেও নাড়া দিয়েছে। ইউনেস্কোর এ স্বীকৃতি তারই প্রমাণ।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ বাঙালির স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বিএনপি-জামায়াত এই ভাষণ রেডিও-টিভিতে নিষিদ্ধ করেছিল। এই দানবের দল ফের ক্ষমতায় এলেই বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আবার নিষিদ্ধ হবে। তাই দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করতে হবে।

শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ হচ্ছে বিশ্বের শোষিত বঞ্চিত মানুষের সাহস ও প্রেরণার উৎস। জিয়াউর রহমান ভাষণটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। আব্রাহাম লিঙ্কনের ভাষণে কোনো ভয়ভীতি ছিল না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সভায় বোমা হামলার আশঙ্কা ছিল। জনসভার ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়ছিল। তিনি সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন।

আলোচনায় আরও অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বিমানমন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাবেক মন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ শহিদুজ্জামান সরকার, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর