বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বঙ্গোপসাগরে ৩২ দেশের বহুপক্ষীয় সমুদ্র মহড়া

আলী আজম, কক্সবাজার থেকে

বঙ্গোপসাগরে ৩২ দেশের বহুপক্ষীয় সমুদ্র মহড়া

কক্সবাজার সৈকতে সমুদ্র সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ —আইএসপিআর

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩২ দেশের নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে বঙ্গোপসাগরে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া গতকাল শুরু হয়েছে। সমুদ্র সম্মেলন ও মহড়া সোমবার উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। মহড়ায় এর ৩২টি দেশের মধ্যে ২৩টি সদস্য ও ৯টি পর্যবেক্ষক দেশের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এবং নৌপ্রধান, ঊর্ধ্বতন নৌ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দেশের মেরিটাইম বিশেষজ্ঞরা অংশ নিচ্ছেন।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের নৌবাহিনীর মধ্যে আঞ্চলিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতা জোরদার করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী বঙ্গোপসাগরে এই আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ার আয়োজন করছে। নৌবাহিনী ২০১৬-২০১৮ সাল পর্যন্ত ‘ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস)-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে। সংস্থার বর্তমান চেয়ারম্যান নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ। বঙ্গোপসাগরে গতকাল শুরু হওয়া সম্মিলিত সমুদ্র মহড়া আজ দুপুরে শেষ হচ্ছে। এ মহড়ায় যুদ্ধজাহাজসমূহে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ হতে জরুরি উদ্ধার অভিযান ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ ফিশিং ট্রলার ও জেলেদের অনুসন্ধান, সমুদ্রে জরুরি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ বিমান অনুসন্ধান ও বাণিজ্যিক জাহাজের অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা প্রদান, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজকে পোতাশ্রয়ে ফিরিয়ে আনা এবং ফ্লিট রিভিউ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যে মেরিটাইম সিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ, সন্ত্রাস ও চোরাচালান দমনসহ বিভিন্ন পেশাগত সহযোগিতা গড়তে ২০০৮ সালে ‘আইওএনএস’ প্রতিষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভারত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমুদ্র ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে সম্পদ আহরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সোমবার ইনানী বিচে আইওএনএস-মাল্টিলেটারেল মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এক্সারসাইজ (আইএমএমএসএআরইএক্স)-এর উদ্বোধনকালে তিনি এই গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, সমুদ্র সম্পদ আহরণে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে একত্রে কাজ করতে হবে।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ও সুনামির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় একটি দেশের পক্ষে কার্যকরভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আঞ্চলিক দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে মহাসাগর অঞ্চলের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় জীবন বাঁচাতে পারে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিরোধের আপস-নিষ্পত্তি করে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

অনুষ্ঠানে ব্লু ইকোনমির গুরুত্ব তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোকে মেরিটাইম ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সবাই সাম্প্রতিক সময়ে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন আছি, সাগরের সম্পদ উত্তোলন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্র খাতের উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, সাগরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই সমৃদ্ধ এই মেরিটাইম ইকোনমির উন্নতি হতে পারে।

সাগরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ‘আস্থার প্রতীক’ হিসেবে গড়ে উঠেছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকারের ব্লু ইকোনমি এজেন্ডা বাস্তবায়নে নৌবাহিনী সাগরে ‘অতন্দ্র অভিভাবকের মতো’ কাজ করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর