সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করেন নবীজী

—— আহমদ আল্-হাসানী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করেন নবীজী

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল মাইজাভাণ্ডার শরিফের বর্তমান ইমাম শাহ্সুফি সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানীর নেতৃত্বে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জশনে জুলুস র‌্যালি বের করে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের বর্তমান ইমাম হজরত শাহ সুফি সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী বলেছেন, মানবতার ত্রাণকর্তা মহানবী (সা.)। অস্ত্রের শক্তি আর জবরদস্তির মাধ্যমে নয়, বরং দয়া, মহানুভবতা ও ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করে আরবের বুকে ইসলামের ঝাণ্ডা উড়িয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ইসলাম ফিতনা-ফ্যাসাদ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু একটি গোষ্ঠী আত্মহত্যাকে জান্নাতে যাওয়ার পথ হিসেবে ব্যাখ্যা করে যুবকদের বিভ্রান্ত করছে। অথচ  ইসলামে আত্মহত্যা নিষিদ্ধ। নবীজী ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করেছেন মহব্বত ও ভালোবাসার মাধ্যমে। আজকে যারা ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে, তাদের মধ্যে আল্লাহর রসুলের মহব্বত নেই। তারা আখেরাতে বিশ্বাস ক?রে না। তিনি সমবেত মুসল্লিদের প্রতি তাদের সন্তানরা যেন এসব ফিতনা-ফ্যাসাদ ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য সচেতন থাকার আহ্বান জানান। 

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। সমাবেশে আমেরিকা, তিউনিসিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ইয়েমেনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। বিশ্বখ্যাত কারি আহমদ বিন ইউসুফ পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও নাতে রসুল পরিবেশন করেন। সম্মেলনের শুরুতে সকাল ১০টায় ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)  উপলক্ষে একটি জশনে জুলুশ র‌্যালি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শাহবাগ ঘুরে মত্স্য ভবন হয়ে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের পীর হজরত শাহ সুফি সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী। পরে বেলুন উড়িয়ে তিনি সমাবেশের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। সমাবেশে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের ভক্ত ও আশেকে রসুলরা অংশ নেন। সমাবেশের  পেছন দিকে নারীদের জন্য আলাদাভাবে বসার ব্যবস্থা করা হয়। বিপুলসংখ্যক শিশু, নারী ও বৃদ্ধ সমাবেশে শরিক হন। তাদের জন্য বড় পর্দায় বয়ান ও মোনাজাত প্রদর্শন করা হয়। সমাবেশস্থলে ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি, আহলে সুন্নাতভিত্তিক তাসাউফ এবং আমলে জিন্দিগির গ্রন্থাদি বিক্রয় ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা ছিল। জিকির আসকার, মিলাদ, হামদ, নাত, দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করা হয়।

সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য এবং বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। হে আল্লাহ মুসলমানরা নির্যাতিত, দয়া করুন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিন, ইয়েমেনের মজলুম মুসলমানদের প্রতি রহমত নাজিল করুন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি ব?লেন, বিশ্বের মুসলমানরাই আজ বেশি শরণার্থী। মুসলমানদের নিয়ে বিশ্ব তামাশা করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, বার্মাতে মুসলিম নিধন চলছে। ইরাক-সিরিয়া, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, মিসর— সব জায়গায় মুসলমানরা মরছে। এমনকি মুসলমানরা মসজিদের মধ্যে নিরাপত্তা বোধ করছে না। জঙ্গিদের হাতে শহীদ হচ্ছে। ইসলামের দুশমনদের অস্ত্র মুসলমানদের ওপর প্রয়োগ হচ্ছে। ইহুদি-নাসারার ইন্ধনে ক্ষমতা ও ধন-সম্পদের লোভে উম্মতেরা নিজেরাই নিজেদের মারছে। মুসলমানরাই আজ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত জাতি। মুসলিম দেশের কিছু শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতার স্বার্থে জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিগত-আকিদাগত জুলুম বেড়েই চলেছে। তিনি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) এদের (ফিতনা সৃষ্টিকারী জঙ্গিদের) বিষয়ে বলেছেন, ভবিষ্যতে উম্মতদের মধ্যে এমন এক দলের আবির্ভাব হবে যারা কোরআন-হাদিস মোতাবেক চলবে না। সমাজে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে। এরা হলো মুনাফেক। তিনি আরও বলেন, ইসলামকে যারা আজ সন্ত্রাসী ধর্ম বানাতে চাইছে তারা সংখ্যায় নগণ্য। রসুলের সুন্নাত আঁকড়ে থাকলে, সবাই সচেতন থাকলে এরা কখনো এ দেশে সফল হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, যারা সমাজের শান্তি বিনষ্ট করে আমরা তাদের যথার্থ  মুসলমান বলি না।

তিউনিসিয়ার ড. মাজন শরীফ বলেন, রোহিঙ্গা থেকে ফিলিস্তিন, আফগান থেকে ইয়েমেন সব জায়গায় মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চলছে। নির্যাতিত মুসলিম বিশ্ব আল্লাহর রহমতের দিকে তাকিয়ে আছে। যারা নবীজীকে ভালোবাসেন, তারা মানুষকে ভালোবাসেন।

ইয়েমেনের শায়খ জায়েদ বিন আবদুর রহমান বিন হোসাইন বিন ইয়াহইয়া বলেন, নবীজী (সা.) আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত। তিনি নিজে প্রতি সোমবার রোজা রেখে নিজের জন্মবার পালন করেছেন। এ জন্য কলবে এশকে রসুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নবীজীকে (সা.) যারা ভালোবাসেন তারা শান্তিকে ভালোবাসেন।

মালয়েশিয়ার শায়খ আবদুল করিম বলেন, ইসলাম শান্তি ও ভালোবাসার ধর্ম। ইসলাম প্রকৃতিসহ কোনো অবলা প্রাণীর ওপর জুলুম অনুমোদন করে না। সেখানে মানুষের ওপর জুলুম কীভাবে অনুমোদনযোগ্য হতে পারে? ইসলামে জুলুম-নির্যাতনের কোনো স্থান নেই।

ইন্দোনেশিয়ার শায়খ আলী মাহফুজান আবদুল্লাহ পবিত্র কোরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, যারা আল্লাহর ভালোবাসা চান, তারা আল্লাহর রসুলকে (সা.) ভালোবাসুন। ভালোবাসা ছাড়া অনুসরণ হয় না। ভালোবাসা ছাড়া শান্তিও প্রতিষ্ঠা হয় না। মিলাদুন্নবী সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে জারি আছে আরব, ইয়েমেন, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ সর্বত্র। কেয়ামত পর্যন্ত এটা জারি থাকবে।

আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব সুফিজমের উপদেষ্টা ড. আহমেদ তিজানী ওমর আয়তুল কুরসি পাঠ করে সমবেত মুসল্লিদের নিয়ে জিকির করেন। তিনি আগ্রহ ভরে নিজকণ্ঠে জোহরের নামাজের আজানও দেন। জোহরের নামাজের পর সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকমুক্ত তাসাউফভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশ সমাপ্ত হয়।

সর্বশেষ খবর