শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিজয় দিবসে বাংলাদেশ ও ভারতের মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা

ঢাকায় মিত্রবাহিনীর ভারতীয় ২৭ যোদ্ধা, কলকাতায় ৩০ মুক্তিযোদ্ধা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ঢাকায় মিত্রবাহিনীর ভারতীয় ২৭ যোদ্ধা, কলকাতায় ৩০ মুক্তিযোদ্ধা

ভারত সরকারের আমন্ত্রণে কলকাতায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গতকাল ঢাকা ছাড়েন বাংলাদেশের ৩০ মুক্তিযোদ্ধা ও ৬ সেনা সদস্যের প্রতিনিধি দল —সৌজন্যে

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতে সংবর্ধনা উপলক্ষে ঢাকা ও কলকাতা পৌঁছেছেন দুই দেশের প্রতিনিধি দল। ভারতের সংবর্ধনা নিতে বাংলাদেশের ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ছয়জন সেনা কর্মকর্তা গতকাল দুপুরে কলকাতায় পৌঁছেছেন। অন্যদিকে বিকালে ঢাকা এসেছেন মিত্রবাহিনীর হয়ে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেওয়া ভারতীয় ২৭ খ্যাতনামা যোদ্ধা এবং ৪ সেনা কর্মকর্তা। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ভারতীয় এই যোদ্ধারা সংবর্ধনা গ্রহণের পাশাপাশি যোগ দেবেন নানা অনুষ্ঠানে। ২০০৫ সাল থেকে বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতের মুক্তিযোদ্ধা ও বীর সেনানীদের এই সফর বিনিময় শুরু হয়। এ পর্যন্ত কলকাতা ও ঢাকায় যথাক্রমে বাংলাদেশের তিন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৫০ ভারতীয় বীর এই সংবর্ধনায় যোগ দিয়েছেন। এবারও মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধাদের চিরন্তন বন্ধন উদযাপনের জন্য ঢাকা ও কলকাতায় এই মিলন মেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন।

ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ২৭ জন ভারতীয় বিশিষ্ট বীর যোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর চার কর্মকর্তা তাদের সঙ্গীদের নিয়ে গতকাল বিকালে ঢাকায় পৌঁছান।       

ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল জয় ভগবান সিং যাদব (অব.)। তিনি ১৯৬৫ সালে পকিস্তানের বিরুদ্ধে এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে বগুড়ার যুদ্ধে বীরত্বের জন্য ‘বীর চক্র’ পুরস্কার লাভ করেন। এ যুদ্ধে তিনি আহতও হয়েছিলেন। প্রতিনিধি দলে থাকা উইং কমান্ডার বিনোদ কুমার নেব, ‘বীর চক্র ও বার’, ছিলেন ১৯৭১ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর তরুণ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট। তিনি ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর ছিলেন একটি কমব্যাট ফরমেশনের অংশ, যা ঢাকা শহরের ওপর ৩টি সার্বে জেটের আক্রমণের শিকার হয়। পরে উইং কমান্ডার বিনোদ কুমার নেব ডগফাইটে একটি সার্বে জেট ভূপাতিত করেন। পরে তিনি কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেট সেক্টরে একাধিক ফাইটার মিশনে অংশ নেন। তিনিও আগে ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে দুবার বীরত্বসূচক ‘বীর চক্র’ উপাধি পান। প্রতিনিধি দলের সদস্য কমোডর আর এন শর্মা (অব.) ১৯৭১ সালে ছিলেন একজন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার। আইএনএস বিক্রান্ত-এ অবস্থানকালে তিনি ভারতীয় ইস্টার্ন  নেভাল ফ্লিটের যুদ্ধ জাহাজ ও বিমানের সমন্বিত অভিযানের দায়িত্বে ছিলেন। যুদ্ধের পর তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের মাইন অপসারণ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনায় যোগ দেওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। তারা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ওয়ার কোর্স ফাউন্ডেশন, ঢাকা ক্লাব এবং ভারতীয় হাই কমিশনের দেওয়া আলাদা সংবর্ধনা গ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রতিনিধি দলটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন এবং মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি যুদ্ধক্ষেত্রও পরিদর্শন করবেন।

অন্যদিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে গতকাল রিজেন্ট এয়ারওয়েজের এক ফ্লাইটে কলকাতা যান বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধি দলটি। তিনজন এমপি, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সামরিক ও বেসামরিক কর্মকতা, বিশিষ্ট ব্যক্তি, সেনা কর্মকর্তা এবং পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন এই দলে। প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে আছেন— সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদ এমপি, গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক এমপি, ওয়াসেকা আয়েশা খান এমপি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লে. জেনারেল (অব.) এম. ফজলে আকবর, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সুলতান মাহমুদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশর মোহাম্মদ সুলতান আহমেদ, প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডার লে. কর্নেল (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম, বাংলাদেশ সংবিধান প্রণেতা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এনায়েত আলী, ব্রিগেডিয়ার (অব.) শহীদুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এসএম শামীম-উজ-জামান, বিমানবাহিনীর সদর দফতরের ওসি-আরও এয়ার কমডোর মহিতুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ। তাদের বিদায় জানান ভারতীয় দূতাবাস ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের আনুষ্ঠানিক এই সংবর্ধনার পাশাপাশি তারা কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সফরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। এ ছাড়াও তারা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িসহ ঐতিহাসিক কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর