বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঐতিহ্যের খেলায় উপচেপড়া ভিড়

প্রতিদিন ডেস্ক

ঐতিহ্যের খেলায় উপচেপড়া ভিড়

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় দর্শকের ঢল নামে। এ সংক্রান্ত প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট—

ফুলবাড়ী : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার  পশ্চিম কুটিচন্দ্রখানায় তিন দিনব্যাপী গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড়, লাঠিখেলা ও দাঁড়িয়াবান্দা ঠুস খেলা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পানিমাছকুটি ও কুটিচন্দ্রখানা সম্প্রীতি ক্লাবের উদ্যোগে  গ্রামের  একতা বিদ্যালয় সংলগ্ন বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে গতকাল বেলা ২টায় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রতিবছর শীতের শুরুতে এ ক্লাব হা-ডু-ডু, বউছি, গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্দা ঠুস, লাঠিখেলাসহ নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। এসব  প্রতিযোগিতায় হাজারো মানুষ ভিড় করে। মায়ের কোলে বসে অথবা বাবার ঘাড়ে বসে বাঁধভাঙা আনন্দে যোগ দেয় হাজার হাজার শিশু, তরুণসহ বয়োজ্যেষ্ঠরা। বেলা ২টায় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী। প্রতিযোগিতার আয়োজক কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন  জানান, প্রথম দিনে ৩৮টি ঘোড়া গ্রুপভিত্তিক দৌড়ে অংশগ্রহণ করে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে ১৯টি করে ঘোড়ার দৌড় অনুষ্ঠিত হবে। এ তিন গ্রুপ থেকে যাদের ঘোড়া বিজয়ী হবে তাদের মধ্যে ফাইনাল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

বাহারি নামের ঘোড়া : সকাল ১০টায় ঘোড়দৌড় শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়। তার আগেই মাঠে আসা শুরু করে মানুষজন। ড্রাম বাজিয়ে, ট্রাকে, পিকআপে চড়ে আসতে থাকে ঘোড়া, ঘোড় সওয়ার, ঘোড়ার মালিক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়োজকরা ঘোড়ার মালিকদের নাম নিবন্ধনের জন্য ডাকতে থাকেন। আর নিবন্ধন শেষে একেকটি ঘোড়ার নাম ভাসতে থাকে মাঠ এলাকায়। পঙ্খিরাজ, পবনরাজ, রাজদুলাল, দুলারী, দুলকি, মুলকি, লালনশাহ, বিয়ারিং বাহারি নাম।

নওগাঁ, নাটোর, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাগুরগাঁও, গাইবান্ধা, বগুড়া, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘোড়াগুলো নিয়ে এসেছিলেন অনেকেই।

ভূরুঙ্গামারীর মইদাম থেকে ঘোড়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছেন হানিফ মাস্টার (৫০)। তিনি জানান, গৃহপালিত প্রাণীদের মধ্যে ঘোড়া আমার প্রিয়। ছোটবেলা থেকে গোড়া প্রতিপালন করে আসছি। প্রতিযোগিতা হলে চলে যাই।

একটি ঘোড়ার সঙ্গে থাকেন আরও অনেকেই। এরকম একজন ওবায়দুল হোসেন, রাজু মিয়া বলেন, পিকআপে করে ঘোড়াগুলো নিয়ে এসেছি। শুধু দৌড়ের জন্য ঘোড়াগুলো পোষা হয়। এটা আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। দৌড়ে অংশ নিয়ে আনন্দ পাই।

লাঠিখেলায় মুগ্ধ ফুলবাড়ীবাসী : কুয়াশার চাদরে ঢাকা চার পাশ। বইছিল শীতল হাওয়া। এরই মধ্যে বিভিন্ন বয়সের দর্শকে কানায় কানায় পূর্ণ চারপাশ। বেজে ওঠে ঢাক আর ঢোলের বাদ্য। হই হই শব্দে মাঠে নামেন লাঠিয়ালরা।মুহুর্মুহু করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। শুরু হয় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। লাঠিয়ালের নানা কসরতে মুগ্ধ হন ফুলবাড়ীবাসী। লাঠিখেলার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মতিয়ার রহমান জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা বিলীন হতে বসেছিল। গ্রামের নতুন প্রজন্মকে লাঠিখেলার সঙ্গে পরিচিত এবং একটু নির্মল আনন্দ দিতে এ খেলার আয়োজন করা হয়। লাঠিখেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল বাপ-বেটার লড়াই। উপজেলার ধনিরাম এলাকার আক্কেল আলী প্রতিযোগিতায় নিয়ে আসেন এক দল। যে দলের কনিষ্ঠ সদস্য তার ছেলে রতন (৫)। খেলার একপর্যায়ে দর্শকদের অনুরোধে শুরু হয় বাপ-বেটার লাঠির লড়াই। বাপের সঙ্গে সমান তালে লড়ে যায় ছেলে। মাঝে মাঝে ছেলের কাছে ধরাশায়ী হন বাপ (বাবা)। উল্লাসে ফেটে পড়ে দর্শকরা।

টাঙ্গাইল : ঘোড়দৌড় উপভোগ করতে গতকাল হাজারো মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় ভূঞাপুরের শালদাইর গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা।

ভূঞাপুরের শালদাইর, ছাব্বিশা, ভাদুরীর চর ও সাফলকুড়া গ্রামের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে গোপালপুর ও ভূঞাপুর উপজেলা ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায়। প্রতিযোগিতায় টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার অন্তত ২০০ ঘোড়া অংশ নেয়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে ঘোড়দৌড় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান (ছোট মনির)। অতিথিরা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। গ্রামীণ ঐতিহ্য ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা প্রতিবছরই আয়োজন করার আশ্বাস দেন আয়োজকরা।

সর্বশেষ খবর