রবিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

শীতে কাঁপছে দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমতে থাকা তাপমাত্রা আর ঘন কুয়াশায় সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। পৌষের এই শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে গ্রাম-শহরের জনপদ। এ অবস্থায় গরম কাপড়ের অভাবে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে ছিন্নমূল মানুষ। আগামী চার দিন এ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন জানান, গতকালের তুলনায় আজকে সারা দেশের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। এই শৈত্যপ্রবাহ আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া আজ মধ্যরাত থেকে সকাল ৯-১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকবে। তবে সূর্যের দেখা মিলবে। তিনি আরও বলেন, গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গাতে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কুয়াশা আর ঠাণ্ডায় কাজে বের হতে পারছেন না মানুষ। হাড় কাঁপানো শীতে গরম কাপড় আর আগুনের উত্তাপই মানুষের ভরসা। কুয়াশার কারণে দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যান চালকদের। রাজধানীসহ দেশের জেলা-উপজেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— পঞ্চগড় : গত তিন দিনে সূর্যের দেখা মেলেনি পঞ্চগড়ে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, হিমালয় থেকে বয়ে আসা হিমবায়ুর প্রভাবে এই কনকনে শীত। পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা ৯-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা-নামা করছে। ফুলবাড়ী : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে তীব্র শীত ও কনকনে ঠাণ্ডায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। ঠাণ্ডা বাড়ায় আলু ও বোরো বীজতলা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষক। গরম কাপড়ের অভাবে নিম্ন আয়ের খেটে-খাওয়া মানুষ কাজে বের হতে পারছেন না।

ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজ কুমার বলেন, শীত নিবারণে দুই কিস্তিতে ৪ হাজার ৪৫০টি কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এসব কম্বল ছয়টি ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে। খুব দ্রুতই আরও ৪৫০টি কম্বল বরাদ্দ পাওয়া যাবে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, গত দুই দিনে আউট ডোরে ২০০ শিশু ও বৃদ্ধের চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে। এদের অধিকাংশই ডায়রিয়া, পেটব্যথা, শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছিলেন। তবে  ইউনিসেফের সহযোগিতায় বার্থ এসফেক্সিয়া রোগের চিকিত্সাও দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুবুর রশিদ জানান, কৃষকদের ঠাণ্ডায় আলুর পচন রোধে ছত্রাকনাশক এবং বীজতলা রক্ষায় সালফার জাতীয় ওষুধ স্প্রের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

দিনাজপুর : দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আজাদুল হক মণ্ডল জানান, গতকাল দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অতিরিক্ত শীতে নষ্ট হচ্ছে ফসল। শীতের কারণে আলু খেতে ছত্রাক জাতীয় রোগ দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান জানান, শৈত্যপ্রবাহের কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে এ অবস্থা খুব বেশি দিন স্থায়ী হবে না।

চুয়াডাঙ্গা : গতকাল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা নেমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারও চুয়াডাঙ্গায় ছিল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সামাদুল হক জানান, ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকে তাপমাত্রা ক্রমাগত নিচের দিকে নামছে। মাঝেমধ্যে দু-একদিন তাপমাত্রা বাড়লেও পরদিন আবার তা নেমে আসে। চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়া গ্রামের পরিবহন শ্রমিক আসাদুল হক বলেন, ‘রাতে ও ভোরে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। কুয়াশার কারণে খুব ধীরে চলাচল করতে হচ্ছে।’ এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামিম কবীর জানান, গত তিন দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫ শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া শিশু ওয়ার্ডে ৩৩ ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৩০ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. শিরীন জেবীন সুমি জানান, এ সময় সচেতনতা খুব জরুরি। বাইরের এবং বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।

নীলফামারী : গত চার দিনেও সূর্যের দেখা না পাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের এই জেলার জনজীবন। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গতকাল নীলফামারীতে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতাল শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, শীতজনিত রোগ সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, জ্বরসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও বয়স্করা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর