শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

অসহায়ের সহায় এখন ৯৯৯

এক মাসে কল এসেছে ৫ লাখ ২৭ হাজার ২৪৩টি ♦ সেবা পেয়েছে ৭১ হাজার ৮৬৮টি কল

আলী আজম

অসহায়ের সহায় এখন ৯৯৯

অসহায়ের সহায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯। জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশি সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ সেবাটি। উন্নত বিশ্বের মতোই এ সেবাটি কাজ করছে। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। আজ শুক্রবার এ সেবাটি এক মাস পার করছে। ৯৯৯ সূত্র বলছে, এক মাসে ৫ লাখ ২৭ হাজার ২৪৩টি কল এসেছে। ৭১ হাজার ৮৬৮টি কল ছিল সমাধানযোগ্য (কল ফর সার্ভিস-সিএসএফ)। যা মোট কলের ১৩.৬৩ শতাংশ। এর মধ্যে পুলিশি সেবা ছিল ৫৯ শতাংশ, ফায়ার সেবা ২৬ শতাংশ এবং অ্যাম্বুলেন্স সেবা ১৫ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর বিষয়ে প্রচারণার অভাব রয়েছে। এই কার্যক্রমের ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। শুধু পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কিংবা অ্যাম্বুলেন্সই নয়, এর সঙ্গে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসাসহ মাঠপর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন সামাজিক ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ সেবাটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। ভুক্তভোগীদের দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই এ সেবা চালু করার কাঙ্ক্ষিত সুফল পাবে সাধারণ মানুষ। ৯৯৯ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ জানান, এই হটলাইন চালু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা চেয়ে ফোন আসছে। অনাকাঙ্ক্ষিত কলের কারণে সমাধানযোগ্য সেবা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। সেবাগ্রহীতার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৭ হাজার কল আসছে। ২৮ জন কল টেকার ২৪ ঘণ্টা এসব কল রিসিভ করছেন। দ্রুত মিলছে সমস্যার সমাধানও। ট্রিপল নাইনে একসঙ্গে ১২০ জন কল করতে পারছেন। তবে এ সংখ্যা দ্রুত কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হবে। তিনি বলেন, কোনো অপরাধ ঘটতে দেখলে, প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দিলে, কোনো হতাহতের ঘটনা চোখে পড়লে, দুর্ঘটনায় পড়লে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে, জরুরিভাবে অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন হলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাওয়া যাবে।

 মোবাইল ও টেলিফোন উভয় মাধ্যমে সম্পূর্ণ টোল-ফ্রি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সেবা নেওয়া যাবে। এই সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ গ্রহণে সবাইকে আহ্বান জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন জানান, ৯৯৯ কেন্দ্রে ফায়ার সার্ভিসের ২টি ডেস্ক রয়েছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা ৬ জন ফায়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেন। সারা দেশে ৩৩৩টি ফায়ার স্টেশন রয়েছে। সব নম্বরই ৯৯৯ কেন্দ্রে আছে। তবে ঘটনার ব্যাপকতা অনুযায়ী কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে- সে কাজটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষই দেখভাল করছে। এই সেবা কেন্দ্রের কারণে দ্রুত অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপ্রয়োজনে অনেকে ফোন করছেন। দিচ্ছেন মিথ্যা তথ্যও। উন্নত বিশ্বে ৯৯৯-এ সব সেবাই মেলে। তাই না জেনে অনেকেই ফোন করেন। গেল এক মাসে ৯৯৯-এ ৮৬.৩৭ শতাংশ অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে। তবে মানবিক কারণে আমরা সেসব কল এড়িয়ে যাই না। সম্ভব হলে আমাদের কর্মীরা সাহায্যও করেন। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) সব থানা ও ফাঁড়িকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন ৯৯৯-এর সব কলকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। সেক্ষেত্রে সব বিভাগ থেকেই সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে প্রথমে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে ৯৯৯ নম্বরে জাতীয় হেল্পডেস্ক চালু করা হয়। ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সেখানে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলে। গত বছরের ৮ অক্টোবর ৯৯৯ নম্বর পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২৬ অক্টোবর থেকে ৯৯৯-এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করে পুলিশ।

গত বছর ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রাজধানীর আবদুল গনি রোডে পুলিশের ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ফায়ার সার্ভিস, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশি সেবা দিতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মোবাইল ও ল্যান্ডফোন থেকে সম্পূর্ণ টোল-ফ্রি কল করে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ৯৯৯-এর সেবা নেওয়া যাবে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর