শিরোনাম
রবিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাঁচ হাত বদলে ঢাকায় মাদক

মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি হয় খোলাবাজারে

মাহবুব মমতাজী

পাঁচ হাত বদল হয়ে ঢাকায় আসে মাদক। সীমান্ত পার হয়ে প্রথমে আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এরপর বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে আসে রাজধানীতে। মতিঝিল, পল্টন ও শাহবাগ এলাকায় হরহামেশা বিক্রি করা হয় এসব ফেনসিডিল। গত বছরের ১৯ নভেম্বর এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে এ তথ্য পেয়েছে পল্টন থানা পুলিশ। শুধু পল্টন এলাকাতেই নয় রাজধানীসহ সারা দেশে চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। নগর-মহানগর থেকে জেলা-উপজেলা-শহর-গ্রাম-গঞ্জ সর্বত্র মাদকের ছড়াছড়ি। কোনো ধরনের রাখঢাক নেই, প্রকাশ্যেই মুড়ি-মুড়কির মতো খোলাবাজারে কেনা-বেচা হয়। মাদকের সহজলভ্যতার কারণে এখন কিশোর ও তরুণ-তরুণীরা আশঙ্কাজনকহারে মাদক সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। মাদক ব্যবসায়ী চক্রও দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এদের দমনে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা। কারণ এদের ধরলেও ছাড়াতে তদবির আসে শীর্ষ পর্যায় থেকে। পুলিশ জানায়, গত ১১ নভেম্বর রাতে রাশেদুল পল্টনের দি ক্যাপিটাল হোটেলের সামনে আক্তার হোসেনের কাছে তিন বোতল ফেনসিডিল বিক্রি করে। গোপনে এ তথ্য পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুজনকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। এ সময় রাশেদুলের পকেট থেকে তিন বোতল এবং আক্তারের পকেট থেকে দুই বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে উভয়ই জানায়,  তারা শাহাজালাল ওরফে বুলেটের কাছ থেকে ফেনসিডিলগুলো এনে খুচরা বিক্রি করে। কৌশলে বুলেটকে একই স্থানে এনে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশকে সে জানায়, মতিঝিলের ফকিরাপুলের গরম পানির গলি ২৫০ নম্বর বাসার তিনতলায় তার আরও কিছু ফেনসিডিল মজুদ রয়েছে। ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে প্লাস্টিকের বস্তায় আরও ৪৭ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করে পুলিশ। পুলিশ তদন্ত করে বের করে পলাতক আসামি বাবু এবং ইব্রাহীমের হাত বদল হয়ে এসব ফেনসিডিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গাজীপুর হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, মাদক নির্মূলের জন্য পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। পুলিশ ছাড়াও সমাজের সর্বস্তর থেকে মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারের পরই রাশেদুলকে ছাড়াতে সচিবালয় থেকে তাদের কাছে তদবির আসে। 

 

ডিএমপির তথ্যানুযায়ী, রমনায় ৫৩টি, লালবাগে ৫৭টি, ওয়ারীতে ৭৭টি, মিরপুরে ৫৬টি, গুলশানে ২৫টি, উত্তরায় ৪০টি, মতিঝিলে ২২টি, তেজগাঁওয়ে ২৫টি চিহ্নিত মাদক স্পট রয়েছে। অন্যদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকা অনুযায়ী মাদক স্পটের সংখ্যা প্রায় ৫০০। 

অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর কারওয়ানবাজারে গড়ে ওঠা খোলামেলা মাদক হাটও বন্ধ হচ্ছে না কোনোভাবেই। জানা যায়, রাজধানীর শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচ মাদক সম্রাজ্ঞী সাহিদা, মাহমুদা, নীলা, জরিনা, মিনা ও কুট্টি কাওরানবাজারে মাদক আড়তদারি খুলেছে। গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের খোলামেলা মাদক আড়তের রমরমা বাণিজ্য চললেও বাধা দেওয়ার কেউ নেই। প্রতিদিন কারওয়ানবাজার রেললাইন ও ঘেঁষা বস্তির আস্তানা থেকে কমবেশি ১০ লাখের বেশি টাকার মাদক কেনাবেচা হয়। আবার পুরান ঢাকাকে মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। লালবাগের আলোচিত মাদক সম্রাজ্ঞী মনোয়ারা আর ইসলামবাগের ছাফি। এ ছাড়া মুন্নি, টগর, তামান্না ও ময়ূরীর মাদক নেটওয়ার্কে কয়েকশ’ নারী-পুরুষ মাদক কেনাবেচার কাজে নিয়োজিত। গেণ্ডারিয়া এবং সূত্রাপুর এলাকায় মাদক ব্যবসা চালায় আনসারী বেগম, রহিমা বেগম, কালামের বউ, আঙগুরী। সায়েদাবাদ ব্রিজ এলাকায় ফেনসিডিল ও হেরোইন বাণিজ্য চালায় শাহজাদী।

সর্বশেষ খবর