শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আইসিইউর অভাবে অসময়ে মারা যাচ্ছেন অনেক রোগী৬

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

আইসিইউর অভাবে অসময়ে  মারা যাচ্ছেন অনেক রোগী৬

চট্টগ্রাম নগরীর মাদারবাড়ী এলাকার মাজনুনা খাতুনকে (৬৩) হৃদরোগ ও কিডনি জটিলতায় ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে। একদিন পরই চিকিৎসক তাকে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রাখার পরামর্শ দেন। কিন্তু আইসিইউতে কোনো শয্যা খালি ছিল না। ফলে তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হয়। এভাবে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মুমূর্ষু রোগীরা আইসিইউ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অসুস্থ রোগীর চরম সংকট মুহৃর্তের অন্যতম ভরসা আইসিইউর অভাবেই অসময়ে মারা যাচ্ছেন অনেক রোগী। বিত্তশালীরা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এ সেবা নিতে পারলেও গরিব ও অসহায় রোগীদের দ্বিতীয় কোনো বিকল্প না থাকায় স্বজনের চোখের সামনেই মৃত্যুর প্রহর গুনতে হচ্ছে। কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার এ ওয়ার্ডটি নিজেই হয়ে পড়েছে মুমূর্ষু।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এ বিভাগটি চলছে খুঁড়িয়ে। ‘আইসিইউ’ নামে পৃথক কোনো বিভাগ নেই। পরিচালিত হচ্ছে অ্যানেসথেসিয়া বিভাগ দিয়ে। দীর্ঘদিনের সংকট চিকিৎসা উপকরণের। নেই প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, দক্ষ জনবল, প্রশিক্ষিত নার্স, টেকনেশিয়ান, আয়া ও ওয়ার্ডবয়। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, ‘বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের চার কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। অথচ এখনো মুমূর্ষু রোগীদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সেবার আইসিইউর শয্যা আছে মাত্র ১২টি। তবে সুখের কথা হলো সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও আটটি শয্যার মৌখিক অনুমোদন দিয়েছেন। আশা করি আগামীতে এটি ২০ শয্যায় উন্নীত হবে।’ তিনি বলেন, ‘আইসিইউকে পৃথক বিভাগ করা, জনবল নিয়োগ দেওয়া এবং উপকরণ  স্থাপন করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে আমি লিখিত জানিয়েছি। তাছাড়া    এখানে বিকল্প হিসেবে অতিরিক্ত ভেন্টিলেটর দেওয়ার জন্যও আমাদের সিদ্ধান্ত আছে।’  চমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আইসিইউ শয্যা পেতে প্রায় প্রতিদিনই আবেদন জমা পড়ে। শয্যা খালি থাকা সাপেক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এ বিভাগের শয্যার জন্য উপর মহলের তদবিরের সংখ্যাও কম নয়। জানা গেছে, ২০০৫ সালে ১২টি শয্যা নিয়ে হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগটির যাত্রা। ১২টি শয্যা থাকলেও প্রায় সময় তিন থেকে চারটি শয্যা প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে নষ্ট থাকে। একটি আইসিইউ শয্যা স্থাপনের জন্য খরচ হয় প্রায় দুই কোটি টাকা।  তবে আইসিইউ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১২ শয্যার বিপরীতে অন্তত আরও ছয় শয্যার উপকরণ বিকল্প হিসেবে প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চমেক হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রায় চার কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসার এ হাসপাতাল। অথচ আধুনিক চিকিৎসার অন্তিম সময়ের শেষ সেবাকেন্দ্র আইসিইউর শয্যা সংকটে প্রতিদিনই চরম কষ্টের মুখোমুখি হচ্ছেন মুমূর্ষু রোগীরা। পক্ষান্তরে চট্টগ্রামে হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ চিকিৎসা কেন্দ্র আছে। কিন্তু তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এসব সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা নেওয়া গরিব-অসহায়দের পক্ষে সম্ভব নয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, নিউরোসার্জারি, গাইনোকোলোজি, কার্ডিওলজি, কার্ডিয়াক সার্জারি, নেফ্রোলজি, মেডিসিন বিভাগ থেকে প্রতিদিনই মারাত্মক রোগীদের আইসিইউতে রেফার করা হয়। কিন্তু আইসিইউতে শয্যা দেওয়া যায় না। ফলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমন রোগীও আইসিইউর অভাবে ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমানে চমেক হাসপাতালে আইসিইউর ১২ শয্যার বাইরে নগরের মা-শিশু হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে আছে ২০টি শয্যা।

তাছাড়া বেসরকারি কয়েকটি হাসপতালে শয্যা থাকলেও তা বেশ ব্যয়বহুল। তবে এসব হাসপাতালের শয্যাগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ নেই বলেও অভিযোগ আছে। তাছাড়া চমেক হাসপাতালে ১৫ টাকার টিকিট কেটে আইসিইউ সেবা পেলেও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে দৈনিক ব্যয় হয় ২০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে মা-শিশু হাসপাতাল ও ডায়বেটিক হাসপাতালে দৈনিক ব্যয় প্রায় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর