শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে নিষ্ক্রিয় ২০ দলীয় জোট

বিএনপি-জামায়াত ছাড়া আর কারও অস্তিত্ব নেই

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীতে নিষ্ক্রিয় ২০ দলীয় জোট

রাজশাহীতে অস্তিত্বহীন ২০ দলীয় জোট। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে-পরে জোটভুক্ত প্রধান দুই শরিক বিএনপি-জামায়াত যৌথভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। কিন্তু এরপরের চার বছরে এ দুটি রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধভাবে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘ সময় ঘরোয়া বৈঠকও হয়নি এ জোটের। কেন্দ্রে বিএনপি-জামায়াত জোটের মতো রাজশাহীতেও এই দুই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে সম্পর্কের টানাপোড়েন। এ ছাড়া জোটভুক্ত অন্য দলগুলোর অস্তিত্ব নেই রাজশাহীতে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান মন্টু জানান, বিএনপি একাই সব কর্মসূচি পালন করছে। জামায়াত ছাড়া জোটের অন্য দলগুলোর নামও তার জানা নেই। এখন জামায়াতের সঙ্গেও তারা কোনো কর্মসূচি বা বৈঠক করছেন না বলে জানান।

বিএনপি এবং জামায়াত ছাড়া জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে আছে ইসলামী ঐক্যজোট, ড. অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, পিপলস লীগ, ডেমোক্রেটিক লীগ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) এবং  সাম্যবাদী দলের একাংশ।

বাস্তবতা হচ্ছে রাজশাহীতে বিএনপি এবং জামায়াত ছাড়া উল্লিখিত অন্য রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। জোটভুক্ত এ দলগুলোর জেলা ও মহানগর কমিটির নেতা কারা সে সম্পর্কেও নেই কোনো তথ্য। এমনকি নেই রাজনৈতিক কার্যালয়। শুধু কাগজ-কলমে আছে ২০ দলীয় জোট। তবে জোটের দ্বিতীয় শরিক জামায়াত এবং এর অঙ্গ সংগঠন ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে না থাকলেও আগামী জাতীয় সংসদ এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে গোপনে সংগঠিত হচ্ছে। বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি থাকাকালে জোটের অস্তিত্ব ছিল। তিনি এ সময় রাজশাহী জেলা এবং মহানগর জোটের আহ্বায়ক ছিলেন। ২০১৩ সালের জুনে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জোটের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় ছিলেন। জামায়াতসহ জোটভুক্ত অন্য দলের নেতা-কর্মীরা বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে মাঠে সরব থেকেছেন। কিন্তু ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে রাজশাহী মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি আসার পর জোটের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে জামায়াতসহ অন্য দলের নেতা-কর্মীরাও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। রাজনৈতিক রীতি অনুযায়ী, জোটের প্রধান দলের শীর্ষ নেতা জোটকে সক্রিয় রাখেন। কিন্তু বুলবুল এ ধারাবাহিকতা চলমান রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

নগর জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা জানান, জোটে বিএনপি বড় দল। এ দলটির শীর্ষ নেতারা অভিভাবকের ভূমিকায় থাকবেন। বিগত সময়ে রাজশাহী নগরী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত ও এর অঙ্গ সংগঠন শিবিরের নেতা-কর্মীদের মাঠে দাঁড়াতে দেয়নি সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময় অসংখ্য নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এ কারণে জামায়াত সাংগঠনিকভাবে নিষ্ক্রিয় হতে বাধ্য হয়েছে। এ সময় রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে বিএনপির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। বিএনপি পাশে না থাকায় আগামী সিটি নির্বাচনে জামায়াত এবার আলাদা প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জামায়াত মেয়র পদে প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছেন নগর জামায়াতের সদস্য আশরাফুল আলম ইমন।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ২০ দলীয় জোট মূলত নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক জোট। বর্তমানে জোটের ব্যাপারে বিএনপি হাইকমান্ডের কোনো নির্দেশনা নেই। এ কারণে রাজশাহীতে জোটের বর্তমান কার্যক্রম অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। তবে আগামী জাতীয় সংসদ এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচন এলে জোট আবার সক্রিয় হবে।

 

সর্বশেষ খবর