বুধবার, ১৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

আমির আলীসহ তিনজনের ফাঁসি

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমির আলীসহ তিনজনের ফাঁসি

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলার আমির আলীসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার আরেক আসামি আবদুল কুদ্দুসের ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। গতকাল বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করে। রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশনের আনীত তিন অভিযোগের সবই প্রমাণিত হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডের তিন আসামির সাজা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কার্যকর হবে। এ রায়ের বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে আপিল করা যাবে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন আমির আহম্মেদ ওরফে রাজাকার আমির আলী, মো. জয়নাল আবদিন ও আবুল কালাম ওরফে এ কে এম মনসুর। এ ছাড়া আবদুল কুদ্দুসের ২০ বছরের সাজা হয়েছে। এদের মধ্যে মনসুর পলাতক।

প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনটি অভিযোগে আসামিদের বিচার হয়েছে। তিনটি অভিযোগই প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।’

গত ৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষে এ মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে নোয়াখালীর সুধারামে ১১১ জনকে হত্যা-গণহত্যার তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৬ সালের ২০ জুন অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ চারজনের বিচার শুরু হয়।

অভিযোগ—১ : ১৯৭১ সালের ১৫ জুন সুধারামের শ্রীপুর ও সোনাপুর গ্রামে আসামি আমির আলী, মনসুর (পলাতক), জয়নাল আবদিন, আবদুল কুদ্দুসসহ ২০-২৫ জন সশস্ত্র রাজাকার ৭০-৭৫ জন পাকিস্তানি আর্মিকে নিয়ে আক্রমণ করেন। গ্রামের ৪১ জনসহ শতাধিক নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা, অমানুষিক নির্যাতন, বাড়িঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করেন।

অভিযোগ—২ : ১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে সুধারামের পশ্চিম করিমপুর ও দেবীপুর গ্রামে আসামি আমির আলী, মনসুর (পলাতক), জয়নাল আবদিনসহ ১৫-২০ জন সশস্ত্র রাজাকার ৮-১০ জন পাকিস্তানি আর্মিকে নিয়ে আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমদকে হত্যা ও মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম ওরফে কালাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া ও পরে তার লাশ না পাওয়া এবং মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেকের বাড়িঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

 

অভিযোগ—৩ : ১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে সুধারামের রামহরিতালুক, দেবীপুর ও উত্তর চাকলা গ্রামে আসামি আমির আলী, মনসুরসহ (পলাতক) ৫০-৬০ জন রাজাকার ১৫০ থেকে ২০০ পাকিস্তানি আর্মিকে নিয়ে আক্রমণ করেন। আনুমানিক ৩০০ নিরীহ-নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে আটক করে রামহরিতালুক স্কুল/ইউনিয়ন বোর্ড অফিসের সামনে নিয়ে নির্যাতন করেন। তার মধ্যে নয়জনকে গুলি করে হত্যা, অনেক বাড়িঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করেন।

নোয়াখালীতে মানববন্ধন, মিষ্টি বিতরণ : নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, আমির আলীসহ চারজনের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার ফাঁসির রায় হওয়ায় নোয়াখালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ সবাই আনন্দিত, তাই তারা খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করছে। গতকাল মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি আমির আলীর বাড়ি নোয়াখালী পৌরসভার ফকিরপুর গ্রামে।  এদিকে দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে জেলা শহর মাইজদী টাউন হল চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এবং মিষ্টি বিতরণ করেন।

নোয়াখালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও গণজাগরণের কর্মীরা আনন্দ উল্লাস করছেন এবং মিষ্টি বিতরণ করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর