বুধবার, ১৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
১৬৫ কোটি টাকা পাচার!

এবার এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিকে জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬৫ কোটি টাকা পাচার মামলার তদন্তে আরব-বাংলাদেশ (এবি) ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল ও ব?্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমান চৌধুরীসহ পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তাকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বেলা দেড়টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গতকাল সকালে মামলার আসামি এবি ব্যাংকের হেড অব অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের (ওবিইউ) মোহাম্মদ লোকমান, হেড অব করপোরেট ব্যাংকিং মোহাম্মদ মাহফুজ উল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নুরুল আজিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এম এ আউয়ালকে দ্বিতীয়বারের মতো জিজ্ঞাসাবাদের জন?্য তলব করেছে দুদক। অনুসন্ধান পর্যায়ে ৭ জানুয়ারি তাকে প্রথমবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল দুদক। ভুয়া অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের নামে ১৬৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ২৫ জানুয়ারি মামলাটি করে দুদক। মামলায় মোট আটজনকে আসামি করা হয়। এরা হলেন এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদ চৌধুরী, পরিচালক মো. ফজলুর রহমান, কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এবি ব্যাংকের হেড অব অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের (ওবিইউ) মোহাম্মদ লোকমান, হেড অব করপোরেট ব্যাংকিং মোহাম্মদ মাহফুজ উল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নুরুল আজিম এবং এবি ব্যাংকের গ্রাহক আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল হক।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের নামে ১৬৫ কোটি টাকা এবি ব্যাংকের চট্টগ্রাম ইপিজেড শাখা থেকে দুবাইয়ে পাচার করে এবং পরে তা আত্মসাৎ করে। আত্মসাৎকালে ওয়াহিদুল হক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। কথিত ওই বিনিয়োগ এবং অর্থ আত্মসাতের নেপথ্যে ব্যাংকের গ্রাহক আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজের সাইফুল হকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। একসময় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে কাজ করা সাইফুল হকের এবি ব্যাংকে কোনো অংশীদারিত্ব নেই। তবে তিনি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা এম মোরশেদ খানের মেয়ের স্বামী। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সাইফুল হক দুবাইয়ে থাকাকালে আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের সদস্য খুররম আবদুল্লাহ ও আবদুস সামাদ খানের সঙ্গে তার সখ্য হয়। তিনি এবি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হকেরও পূর্বপরিচিত। সাইফুল হকই এবি ব্যাংকের অর্থ পাচারের বিষয়ে ওই প্রতারক চক্রের সঙ্গে ?ওয়াহিদুল হককে পরিচয় করিয়ে দেন। পরে দুবাই ও বাংলাদেশে একাধিকবার বৈঠক করেন তারা। মামলার এজাহারে বলা হয়, ওয়াহিদুল হক ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল ব্যাংকের বোর্ডকে না জানিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুবাই গিয়ে প্রতারক চক্রের সঙ্গে বৈঠক করেন। আর ওই প্রতারক চক্র পিনাকল গ্লোবাল ফান্ড (পিজিএফ) নামে একটি কোম্পানি সৃষ্টি করে। সেই কথিত পিনাকলের আট কোটি ডলারের সঙ্গে এবি ব্যাংকের দুই কোটি ডলার মিলিয়ে ১০ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠন করে তা দুবাইয়ে বিনিয়োগের একটি কাল্পনিক প্রস্তাব তৈরি করা হয়। আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও শামীম আহমেদের যৌথ স্বাক্ষরে ২০১৩ সালে ব্যাংকের বোর্ডসভায় উপস্থাপন করে তা পাস করিয়ে নেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়ে চেং বাও জেনারেল ট্রেডিং এলএলসি নামের এক কোম্পানির নামে পাঠানো ওই দুই কোটি ডলার আবুধাবির একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যায়। সেখান থেকে পরে তা আত্মসাৎ করা হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে অর্থ পাচারের ওই ঘটনা ঘটে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। মামলা করার পর এম ওয়াহিদুল হকসহ তিন আসামিকে গ্রেফতার করে দুদক। এর মধ্যে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ছাড়া অন্য আসামিরা জামিনে আছেন।

সর্বশেষ খবর