বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

যাত্রাবাড়ীতে কাগজের নকল কারখানা

বসুন্ধরা কাগজ নকল করে বাজারে ছাড়ছিল চক্রটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

উন্নতমানের কাগজ নকল করে বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এজন্য নামি ব্যান্ডের নাম ব্যবহার করছে প্রতারকরা। সাধারণ মানুষ না বুঝে এ কাগজ কিনে প্রতারিতও হয়েছে। রাজধানীর যাত্রবাড়ীর দনিয়ার রসুলপুরে এমনই একটি কারখানার সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তারা। ওই কারখানায় জনপ্রিয় বসুন্ধরার কাগজ নকল করে তৈরি ও গুদামজাত করা হচ্ছিল। গতকাল ওই অভিযানে কারখানাটির চার কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ নকল কাগজ ও কাগজ তৈরির মেশিনপত্র। তবে গাঢাকা দিয়েছেন কারখানাটির মালিক শফিউল্লাহ ওরফে খোকন। এ ঘটনায় গতকালই যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেছে বসুন্ধরা পেপার মিল কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তারা বলেছেন, নকল কাগজ তৈরির প্রতিষ্ঠান ও বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান চালানো হবে। এসব নকল কারবারির ব্যাপারে ক্রেতাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বসুন্ধরা পেপার মিল কর্তৃপক্ষ।

ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মাহফুজা আফরোজ লাকি বলেন, যাত্রাবাড়ীর দনিয়ার শাহি মসজিদ রোডের রসুলপুরের ৬১ নম্বর হোল্ডিংয়ের চার তলা ভবনের নিচে নকল কাগজের কারখানা চালু করেছিল এই চক্র। তারা বসুন্ধরা পেপার মিলের নাম ও মোড়ক ব্যবহার করছিল। আজ (গতকাল) বিকালে অভিযান চালিয়ে সেখানে বিপুল পরিমাণ ‘এ ফোর’ সাইজের কাগজের বান্ডিল পাওয়া যায়, যেগুলোর মোড়কে বসুন্ধরার লোগো লাগানো ছিল। এ ছাড়া তৈরির মেশিন, কাটিং মেশিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জামও জব্দ করা হয়। ওইদিন রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে কারখানাটির চার কর্মকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মালিক শফিউল্লাহ গাঢাকা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় আজ (গতকাল) যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেছে বসুন্ধরা পেপার মিল কর্তৃপক্ষ। স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটির পণ্য নকল করে বাজারজাত করায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ধরনের আরও কারখানা আছে কিনা, সে ব্যাপারেও খোঁজ চলছে।

ডিবি কর্মকর্তারা বলেছেন, জব্দ কাগজের পরিমাণ প্রায় ৫২ কার্টন। এ ছাড়া বসুন্ধরার মোড়ক ও লেবেল আছে প্রায় ৫ হাজার। প্রতিটি সরঞ্জাম ও উপকরণে বসুন্ধরা পেপারের নকল করে চক্রটি। বসুন্ধরা পেপার মিলের রিকভারি শাখার কর্মকর্তা এ কে এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সংঘবদ্ধ একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে গোপনে নকল বসুন্ধরা পেপার তৈরি করে বাজারজাত করে আসছিল। আর এসব কাগজ কিনে প্রতারিত হচ্ছিল গ্রাহক। বসুন্ধরা এ ফোর সাইজের কাগজ ৮০ জিসিএম হলেও উদ্ধারকৃত নকল কাগজ ১০ থেকে ৬০ জিসিএম মানের।’ তিনি ক্রেতাদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বসুন্ধরা কাগজের উন্নত মানের কারণে এর জনপ্রিয়তা অনেক। এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে প্রতারক চক্র। আর এসব চক্রের নকল কাগজ মানহীন। ক্রেতাদের সন্দেহ হলে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত জানালে প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে চক্রকে ধরা হবে। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ীর প্রধান সড়ক থেকে ৫০০ গজ দূরত্বের মধ্যেই রসুলপুরে নকল কারখানাটির অবস্থান। শাহি মসজিদ রোডের ৬১ নম্বর চার তলা ভবনের নিচ তলা ভাড়া নিয়ে এক মাস আগে নকল কারখানা গড়ে তোলেন শফিউল্লাহ। স্থানীয়রা বলছেন, মূলত রাতের বেলায় এ কারখানায় নকলের কাজ হতো। এলাকাবাসীর সন্দেহ হলেও গোপন এ কারবার সম্পর্কে ধারণা ছিল না তাদের। গতকাল পুলিশের অভিযানে বিষয়টি জানাজানি হলে অবাক হন সবাই। বাড়ির মালিক আবুল খায়ের পুলিশের কাছে দাবি করেন, তার বাসার নিচে বসুন্ধরা পেপার মিলের কাগজ নকল করে গুদামজাত করা হচ্ছে, তা জানা ছিল না তার। কাগজ ব্যবসার কথা বলে খোকন (শফিউল্লাহ) বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে ভাড়াটিয়া সেখানে কী কাজ করছিলেন তার খোঁজ নিতে পারেননি বলে জানান আবুল খায়ের। নকল কারখানার পাশের ওষুধের দোকানের কর্মচারী আলম শেখ বলেন, ‘এক মাস হলো এক ব্যক্তি ওই বাসার নিচ তলা ভাড়া নেন। এর ভিতরে কী কাজ করতেন তা জানার উপায় ছিল না। এটা কাগজের মিল, আমরা তাই জানতাম। তবে নকল কাগজের মিল তা জানা ছিল না।’

সর্বশেষ খবর