শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

হঠাৎ রক্তাক্ত সিলেট

দেড় মাসে পাঁচ জোড়া খুন, তিন মাসে অর্ধশত

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

হঠাৎ রক্তাক্ত সিলেট

হঠাৎ করেই রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে গোটা সিলেট। বাড়ছে অস্থিরতা। একের পর এক মার্ডারে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সর্বত্র। প্রায় দেড় মাসের মধ্যে সিলেটে ডাবল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে পাঁচটি। তিন মাসে ঘটেছে প্রায় অর্ধশত খুনের ঘটনা। সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সামাজিক অবক্ষয়সহ নানা কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ঘটনা ঘটছে।

জানা গেছে, ১ এপ্রিল সিলেট নগরের মিরাবাজার খাঁরপাড়া মিতালী ১৫/জি নম্বর বাসা থেকে পারলার ব্যবসায়ী রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘাতকরা রোকেয়া বেগমের শিশুকন্যা রাইসাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গলা চেপে ধরেছিল। এতে সে অজ্ঞান হয়ে গেলে মৃত ভেবে ফেলে যায় ঘাতকের দল। বর্তমানে রাইসা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আছে। গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের একারাই গ্রামের হাওর থেকে ২৪ মার্চ দীপু মালাকার ও তার ছেলে বিকাশ মালাকারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়, ধর্ষণের পর দীপু মালাকারকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সাক্ষী না রাখতে বিকাশকেও খুন করা হয়।

২৪ মার্চ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বহর ও মিত্রিমহল গ্রামের লোকদের মধ্যে মসজিদের জমি নিয়ে বিরোধে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। এতে বহর গ্রামের মনাই মিয়া ও রুমেল আহমদ নামের দুজন খুন হন। ১৬ মার্চ দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে বাবুল মিয়া ও মাশুক মিয়া নামের দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ৬ ফেব্রুয়ারি কোনাউড়া নোয়াগাঁও গ্রামে তিন বছর বয়সী নাহিদুল ইসলাম মারুয়ান ও দেড় বছর বয়সী ওয়াহিদুল ইসলাম রুমনকে বালতির পানির মধ্যে চুবিয়ে হত্যা করা হয়। খোদ মায়ের বিরুদ্ধেই এ হত্যার অভিযোগ ওঠে। এসব ডাবল মার্ডারের ঘটনা ছাড়াও নানা কারণে সিলেটে একের পর এক লাশ পড়ছে। ২৫ মার্চ কদমতলি এলাকায় খুন হন শাবির সাবেক শিক্ষার্থী মাহিদ আল সালাম, ১৮ ফেব্রুয়ারি কানাইঘাটে ইবরাহিম আলীর হাতে খুন হন স্ত্রী জাহানারা বেগম, ২৪ ফেব্রুয়ারি সুবিদবাজারে ছুরিকাঘাতে খুন হন শিমুল দেব, জৈন্তাপুর উপজেলায় ২৫ ফেব্রুয়ারি খুন হন মাদ্রাসাছাত্র মুজম্মিল আলী, ২৫ জানুয়ারি স্বামী হেলাল মিয়া গলা কেটে খুন করেন স্ত্রী লুবনা বেগমকে, ৩১ জানুয়ারি ছেলে কামাল হোসেনের হাতে খুন হন ছয়মুন বিবি, ২২ জানুয়ারি সোবহানীঘাটে একটি হোটেল থেকে মিন্টু দেব ও রাখি পাল নামের দুই তরুণ-তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়, ১ জানুয়ারি প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন ছাত্রদল নেতা আবুল হাসনাত শিমু, ৭ জানুয়ারি টিলাগড়ে প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ যায় ছাত্রলীগ কর্মী তানিম খানের।

একের পর এক খুনের ঘটনায় সিলেটজুড়ে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। সমাজ বিশ্লেষকরা এসব ঘটনার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সামাজিক অনুশাসন ভেঙে পড়াকে দায়ী করছেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সুশাসনের অভাবে এসব ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া সামাজিক অবক্ষয় থেকেও অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়।’ শাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে দূরে ঠেলে পশ্চিমা সংস্কৃতি গ্রহণ, মিডিয়ায় বিজাতীয় সংস্কৃতির উপস্থাপন পরিস্থিতিকে জটিল করছে।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর