শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

দৃশ্যমান হচ্ছে স্বপ্নের রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র

ইউনিট-১-এর ভিত্তিপ্রস্তরের ঢালাই কাজ শেষ

জিন্নাতুন নূর

দৃশ্যমান হচ্ছে স্বপ্নের রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র

স্বপ্নের রূপপুর প্রকল্পের নির্মাণকাজে আরও একধাপ অগ্রগতি হয়েছে। এরই মধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটির অবকাঠামো। ডিজাইন ও কনস্ট্রাকশন লাইন্সেসপ্রাপ্তির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের ইউনিট-১-এর মূল পর্বের নির্মাণকাজ শুরুর লক্ষ্যে ২০১৭-এর ৩০ নভেম্বর এ প্রকল্পের প্রথম ঢালাইকাজ উদ্বোধন করেন; যার মাধ্যমে বিশ্বে নিউক্লিয়ার ক্লাবের গর্বিত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। সর্বশেষ সোমবার (২ এপ্রিল) রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম কর্তৃপক্ষ এ প্রকল্পের ইউনিট-১-এর ভিত্তিপ্রস্তরের ঢালাইকাজ শেষ করেছে। প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি আমাদের জন্য এক ধরনের মাইলস্টোন। বলা যায়, পদ্মা সেতুর মতো রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পও ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে।’

শৌকত আকবর বলেন, ‘এ প্রকল্পের ইউনিট-১-এর ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণের ঢালাইকাজ শেষ হয়েছে। আমরা প্রকল্পটির দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য ডিজাইন ও কনস্ট্রাকশন লাইসেন্সের আবেদন করেছি। আশা করছি অচিরেই লাইসেন্সপ্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ইউনিট-২-এরও মূল পর্বের নির্মাণকাজ শুরু করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের কাজ শুরু হলে নির্মাণকাজে কোনো বিরতি দেওয়া হয় না। দেখা যায়, তখন সপ্তায় টানা ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলে।’ এদিকে ভবিষ্যতে এ প্রকল্পটি পরিচালনা করবে যে দল, সেই ১২৪ মেধাবীকে বাংলাদেশির পর্যায়ক্রমে রাশিয়ায় উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হবে; যার মধ্যে আসছে মে মাসে প্রথম ব্যাচটিকে প্রশিক্ষণের জন্য রাশিয়ায় পাঠানো হবে। আর এই ৮ এপ্রিল ৫৫ জনকে ভারতে দেড় মাসের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হচ্ছে। সেখানে তাদের ফাউন্ডেশন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বর্তমানে বিশাল এই কর্মযজ্ঞ ঘিরে চলছে রাতদিনের কাজ। ইউনিট-১-এর কংক্রিট ভিত্তিপ্রস্তর ঘিরে যে গোলাকৃতি ডুম তৈরি হবে সেখানে লোহার দণ্ড বসানো হয়েছে; যা ক্রমেই একটি অবয়ব ধারণ করবে। বর্তমানে হাজার একরেরও বেশি এলাকাজুড়ে পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে যে ব্যয়বহুল ও বিশাল উন্নয়নযজ্ঞ চলছে সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে বড় বড় বিদেশি ভারী যন্ত্রপাতি। বাংলাদেশ ছাড়াও এ প্রকল্পের নকশা বাস্তবায়নকারী দেশ রাশিয়া ও প্রকল্প নির্মাণে সহযোগী দেশ ভারতের বিশেষজ্ঞ বাহিনী একত্রে গড়ে তুলছে এই বৃহৎ স্থাপনা।

 রাতদিন চলা বিশাল এই কর্মযজ্ঞের জন্য এরই মধ্যে রূপপুর ও তার আশপাশের এলাকা বদলে যেতে শুরু করেছে।

 দেশি-বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও এ প্রকল্পের কাজে অংশ নিয়েছেন বহু শ্রমিক।

রোসাটমের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে আধুনিক জেনারেশন থ্রি প্লাস প্রযুক্তির ভিভিইআর-১২০০ নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে এই প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সাশ্রয়ী। এ ছাড়া এটি পরিচালনা করতে তুলনামূলক কম জনবল লাগে। এই প্রযুক্তিতে পারমাণবিক জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম বেশি ব্যবহূত হয় ফলে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদ্যুৎও বেশি উৎপাদন হবে। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের প্রথম ইউনিটটি ২০২৩ সালে ও দ্বিতীয়টি ২০২৪ সালে উৎপাদনে আসার কথা।

সর্বশেষ খবর