শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

চিকিৎসা অবহেলায় দুই প্রসূতির মৃত্যু!

উধাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেটে একই হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের ১০ ঘণ্টার মধ্যে দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে নগরীর মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় ডিএমটি সেইফওয়ে হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসা এই মৃত্যুর জন্য দায়ী। এদিকে, দুই প্রসূতির মৃত্যুর পর উধাও হয়ে যান হাসপাতালের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা।

মারা যাওয়া প্রসূতিরা হলেন শহরতলির খাদিম কল্লগ্রামের সাখাওয়াত হোসেনের স্ত্রী আছমা বেগম (২৩) ও জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের চোলাহাটি গ্রামের রুবেল হোসেনের স্ত্রী ফয়জুন নাহার চৈতী (২১)। আছমা সকাল ৭টায় ও চৈতী সকাল সাড়ে ৭টায় সেইফওয়ে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

আছমা বেগমের চাচাতো ভাই কাইয়ুম আল রনি জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে তার বোনের সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. মিনতি সিনহা। শেষ রাত পর্যন্ত তার অবস্থা ভালো ছিল। এরপর অবস্থার অবনতি হলে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের কক্ষে কোনো চিকিৎসক খুঁজে পাননি। পোস্ট অপারেটিভ কক্ষের কর্তব্যরত নার্সও তখন ঘুমাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা না পেয়ে সকাল ৭টার দিকে তার বোন মারা যান। এরপর চিকিৎসা বিল না রেখেই হাসপাতালের কর্মকর্তারা বাড়িতে নিয়ে লাশ দাফন করার জন্য চাপ দেন। চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানান রনি।

ফয়জুন নাহার চৈতীর স্বামী রুবেল হোসেন জানান, ভোররাত থেকে তার স্ত্রীর অবস্থার অবনতি হতে থাকলেও তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা পাননি। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একজন চিকিৎসক এসে জানান তার স্ত্রীর অবস্থা বেশি খারাপ। এক্ষুনি আইসিইউতে ভর্তি করতে হবে। তাদের হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় অন্য হাসপাতালে নিতে বলা হয়। তত্ক্ষণাৎ তিনি রাগীব রাবেয়া মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রুবেলের অভিযোগ, বিনা চিকিৎসায় তার স্ত্রী সেইফওয়ে হাসপাতালেই মারা গেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের দোষ ঢাকতে আইসিইউ নাটক সাজান।

এদিকে, দুই প্রসূতির মৃত্যুর খবর পেয়ে তাদের স্বজন ও সংবাদকর্মীরা ভিড় করলে হাসপাতালের পরিচালকরা কেটে পড়েন। এক রোগীর মৃত্যু ও অন্যজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন সিজার অপারেশনকারী চিকিৎসক মিনতি সিনহা। তিনি বলেন, আছমা ও চৈতীর সিজারিয়ান অপারেশন তিনি নিজে করেছেন। অপারেশনে কোনো সমস্যা ছিল না। অপারেশনে সমস্যা হলে রোগী সঙ্গে সঙ্গে মারা যেতেন বা কিছু সময় পরই সমস্যা দেখা দিত। রাতে তিনি হাসপাতাল ত্যাগের সময় দুই প্রসূতির শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল। তিনি হাসপাতাল ত্যাগের পর পোস্ট অপারেটিভে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কোনো চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দুই প্রসূতির মৃত্যু হতে পারে— এমন আশঙ্কার কথার জানিয়ে ডা. মিনতি বলেন, এজন্য লাশের ময়নাতদন্তের প্রয়োজন। ময়নাতদন্ত করা গেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বের হয়ে আসবে।

সর্বশেষ খবর