শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রাজীব সাভারে সিআরপিতে আয়েশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রাজীব সাভারে সিআরপিতে আয়েশা

লাইফ সাপোর্টে থেকে গতকাল চতুর্থদিনেও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন দুই বাসের চাপায় হাত হারানো কলেজছাত্র রাজীব হোসেন। অবস্থার উন্নতি হয়নি বলে জানালেন ভারাক্রান্ত মামা জাহিদুল ইসলাম। ভাগ্নের এমন কষ্টে পাশে থাকা খালা জাহানারা বেগমেরও চোখের পানি আগেই শুকিয়ে গেছে। মা-বাবা হারা এতিম আবদুল্লাহ ও মেহেদী হাসানের কাছে পৃথিবীর সবকিছু রাজীব। বড় ভাইয়ের এমন করুণ পরিণতিতে তারাও নির্বাক।

রাজধানীর তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের এই আপনজনরা ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউর সামনে বসে স্মরণ করছেন সৃষ্টিকর্তাকে।

এদিকে দুই বাসের চাপায় মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়া আয়েশা খাতুনকে (২৫) রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার সাভারের সিআরপিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। তার চিকিৎসায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আগামীকাল সিআরপিতে ডা. সাঈদ উদ্দিনের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ড বসার কথা রয়েছে। রাজীবের মামা জাহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, কর্তব্যরত চিকিৎসকরা শুধু তাদের আল্লাহকে স্মরণ করতে বলেছেন। যদি আল্লাহ চান— তবেই রাজীব সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। বৃহস্পতিবার সকালে তার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছিল। পরে আইসিইউর চিকিৎসকরা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে ওষুধ পরিবর্তন করে চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, রাজীবের অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। তিনি নিউরোলজিকেলি ডাউন। শ্বাসকষ্টও আছে। দুর্ঘটনায় হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি রাজীবের মাথার সামনে ও পেছনের হাড় ভেঙে যায় এবং ব্রেইনের সামনের দিকে আঘাত লাগে। প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের বাসের পাড়াপাড়িতে রাজীবের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনার পরই রাজীবকে প্রথমে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তার চিকিৎসায় অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান ডা. এমএস জামান শাহিনের নেতৃত্বে চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের পরামর্শক্রমে ঢামেকের আইসিইউতে শুরু হয় তার চিকিৎসা। ক্রমেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু রাজীব হাত হারালেও ওই দুর্ঘটনায় মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান, ফলে মস্তিষ্কের সামনের অংশে রক্ত ও পানি জমে যায়।

টানা পাঁচদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গত ৯ এপ্রিল চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পরের দিন অর্থাৎ ১০ এপ্রিল তাকে আইসিইউ থেকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করবেন।

 কিন্তু তার আগেই সবাইকে শঙ্কায় ফেলে দেন রাজীব। অবস্থার অবনতি ঘটলে ওইদিন ভোরে তাকে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। এরপর টানা চারদিনেও তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। 

এদিকে, রাজীব হোসেনের এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে গত ৫ এপ্রিল রাজধানীর চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে বেপরোয়া দুই বাসের চাপায় গুরুতর আহত হন গৃহবধূ আয়েশা খাতুন। এতে তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়। ওইদিনই অস্ত্রোপচার করে মেরুদণ্ডে চারটি স্ক্র ও দুটি রড লাগানো হয়। সর্বশেষ আরেকটি অস্ত্রোপচার করতে বুধবার রাতে ডা. মাসুদ আনোয়ারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ড বসে। চিকিৎসকরা আয়েশার স্বজনদের জানান, মেরুদণ্ডের হাড় কয়েক টুকরো হয়ে যাওয়ায় স্পাইনাল কটগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। যে কারণে ওই স্থানের কোনো কিছু মস্তিষ্কে সাড়া পায় না।

তবে আয়েশার স্বামী তানজীর আহমেদ তাহের জানান, সিআরপিতে আনার পর চিকিৎসক ডা. উর্মি তাদেরকে জানিয়েছেন— স্পাইনাল কট ঠিক করার সঙ্গে অস্ত্রোপচারের কোনো সম্পর্ক নেই।

সর্বশেষ খবর