শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

অনিয়ম দুর্নীতিতে ডুবছে চট্টগ্রামের শিক্ষা খাত

তদন্ত কমিটি গঠন করলেন সিটি মেয়র

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ভারে থমকে গেছে। শিক্ষা বিভাগের নানাবিধ অনিয়ম ঠেকাতে ইতিমধ্যে বর্তমান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের নির্দেশনায় একটি যাচাই-বাছাই কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে বদলি ও নন-এমপিওদের এমপিও করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে নন-এমপিওরা যেমন এমপিওভুক্ত হতে আগ্রহী নন তেমন এমপিওভুক্তরা স্ব স্ব স্কুলে যেতে আগ্রহ দেখালেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ব্যক্তিগত নানাবিধ সমস্যার কারণে প্রতিনিয়ত আতঙ্কিত হচ্ছেন বলেও একাধিক শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা জানান। এসব বিষয়ে একাধিক অভিযোগও চসিক ও শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছে। জানা যায়, মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আর উচ্চমাধ্যমিকে শতভাগ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করছেন, কুয়াইশ বুড়িশ্চর শেখ মোহাম্মদ কলেজ চলছে একজন কম্পিউটারে ডিপ্লোমাধারী শিক্ষককে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে। রাজনৈতিক চাপে অধ্যক্ষ নিয়োগ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া স্কুল ও মহিলা কলেজে দেখা দিয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ। রয়েছে জামায়াত কানেকশন শিক্ষকও। এতে স্কুলের মধ্যে সিন্ডিকেট তৈরি করে গড়ে তোলা হচ্ছে নানা অনিয়ম। সেই সিন্ডিকেটের হাত শক্তিশালী করতে দেওয়া হচ্ছে নানাবিধ মিথ্যা তথ্যও। আরও জানা যায়, চসিকের এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিও শিক্ষকদের নিয়ে যে উদ্যোগ মেয়র গ্রহণ করেছেন সেগুলো বিতর্কিত করতে চিহ্নিত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী কৌশলী ভূমিকা পালন করছেন। পছন্দের লোকদের বাদ দিয়ে ইচ্ছামতো তালিকা তৈরি করার প্রবণতাও শুরু হয়েছে। এতে যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে কাজ করতে এ কমিটিতেই নেতৃত্বে থাকবেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন নিজেই। চসিকসূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন সিটি মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পর বছরে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকির কথা চিন্তা করে শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন। ব্যাপক নৈরাজ্য ও অনিয়ম দূর করার লক্ষ্যে তদন্ত ও যাচাই-বাছাই করতে চট্টগ্রামের একটি দৈনিকের সম্পাদককে ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব প্রদান করেন মেয়র। তিনি ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ১২ ডিসেম্বর মেয়র বরাবর একটি প্রতিবেদন জমা দেন। এতে যেসব শিক্ষক, শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের শোকজ দেওয়ার সুপারিশ করেন। শুধু তাই নয়, কারণ দর্শানোর নোটিসগুলো লিখে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর জমাও দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে দীর্ঘদিন কালক্ষেপণ করে পরবর্তীতে সচিবের দফতরে পাঠিয়ে দেন। গত সপ্তাহে এসব কাগজপত্র শিক্ষা বিভাগে পাঠালে তা আবার যাচাই-বাছাই করছেন প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিভাগ চালু থাকলেও পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, বিজ্ঞানাগার নেই, লাইব্রেরি নেই, আইসিটি ল্যাব নেই, এমনকি শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচ্ছন্ন ওয়াশরুমও নেই। আরও জানা গেছে, শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন পরীক্ষার ফি, খাতা কেনা, প্রশ্ন মুদ্রণ কার্যক্রমে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি হওয়ার অভিযোগ ওঠে। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হচ্ছে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নগরবাসীর শিক্ষাসেবা আমাদের চালিয়ে যেতে হচ্ছে। নগরে যে পরিমাণ শিক্ষার্থীর চাপ রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা না করলে কী অবস্থা হতো তা চিন্তাও করা যায় না। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও চালাতে হবে আবার ভর্তুকিও কমানোর যথাসাধ্য উদ্যোগ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে এমপিওবিহীন শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ শিক্ষা খাতে আরও কীভাবে উন্নয়ন ও গতিশীল করা যায় সে বিষয়েও মনিটর করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রাথমিক তালিকাভুক্তি বিচার-বিশ্লেষণের জন্য একটি যাচাই-বাছাই কমিটি করা হয়েছে। এতে কোনো ধরনের তথ্য-উপাত্তগত ত্রুটি বা অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হলে সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক তালিকাটি পুনর্মূল্যায়ন করে নতুন তালিকা তৈরি করা হবে। কোনো ধরনের প্রশ্ন যাতে না ওঠে সেজন্য কঠোর নির্দেশনা রয়েছে এবং সরাসরি দেখাশোনা করছি। তবে কেউ কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান মেয়র।

সর্বশেষ খবর