শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রবাসীদের এনআইডি দেওয়ার সুপারিশ

প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটাধিকার প্রয়োগ শীর্ষক সেমিনার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলেও অন্তত জাতীয় পরিচয়পত্র দ্রুত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর সুপারিশ করেছে বিশিষ্টজনরা। এক্ষেত্রে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) যাদের রয়েছে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন তারা। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটাধিকার প্রয়োগ’ সংক্রান্ত  সেমিনারের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। সেমিনারে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি নেতা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, রাষ্ট্রদূত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, প্রবাসী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারের শুরুতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা জানান, প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার করতে দ্বৈত নাগরিকতা প্রধান সমস্যা। মূল প্রবন্ধে প্রবাসীদের এনআইডি দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সুবিধা-অসুবিধা, চ্যালেঞ্জ ও ইসির উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রবাসীদের ভোটার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে সুবিধা-অসুবিধা বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান সেমিনারে ইসির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রবাসীদের ভোটার করতে এনআইডি উইং ও এমআরপি যৌথভাবে কাজ করতে পারে। ভোটের বিষয়টি জটিল হলেও এনআইডি দেওয়ার প্রক্রিয়া নেওয়া যেতে পারে। পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থাও বেশ কঠিন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে ভোট দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, ভোট দিতে এনআইডি লাগে না। সেক্ষেত্রে প্রবাসীদের এনআইডি দেওয়ার দ্রুত প্রক্রিয়া  নেওয়া উচিত।

এমআরপি দেওয়া সম্ভব হলে এনআইডিও দেওয়া যাবে। যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করলে প্রবাসীদের জন্য বেশ লাভবান উদ্যোগ হবে। সাবেক এ রাষ্ট্রদূত জানান, সৌদি আরবের মতো বড় কোনো দেশে কাজ শুরু না করে ছোট্ট কোনো দেশে যেখানে কম প্রবাসী রয়েছে তাদের পরীক্ষামূলকভাবে এনআইডি দেওয়া যায়। এ অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে কাজে লাগানো সম্ভব হবে।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য হয়তো প্রবাসীদের ভোটার করা যাবে না; তবে এরপরেই বাস্তবতা বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া যায়। পাশাপাশি যাদের এমআরপি রয়েছে তাদেরই প্রথমে অগ্রাধিকার দিয়ে এনআইডি দেওয়া  যেতে পারে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম. সাখাওয়াত হোসেন তাদের সময়কার নেওয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা উদ্যোগ শুরু করেছিলাম। বর্তমান কমিশনও তাদের মেয়াদে প্রবাসীদের বিষয়ে কাজ করতে পারলে ভালো হবে। তাড়াহুড়ো করলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে তা সম্ভব হবে না। তবে কাজটা যেন চলমান থাকে।

সাবেক কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, প্রবাসীদের প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে হবে। এরপর দেখতে হবে কীভাবে তারা ভোট দিতে পারে।

ইতালিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার জানান, দ্বৈত ভোটারদের এনআইডি দেওয়ার সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি মিশন প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ বলেন, ডুয়েল সিটিজেনদের নির্বাচনে যেহেতু প্রার্থী হওয়ার অধিকার নেই, তাই তিনি ভোটারও হতে পারবেন না। প্রথমে যারা দ্বৈত নাগরিক নয় তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হোক।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের চিত্র তুলে ধরে জানান, ২১ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৪৫ শতাংশ লোকের হাতে এনআইডি নেই। ইসি উদ্যোগ নিলে দূতাবাস সব ধরনের সহায়তা করবে। প্রবাসীদের এনআইডির প্রয়োজন প্রতিটি ক্ষেত্রে। ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা লাগবে না, ভোট বড় কথা নয়; কিন্তু এনআইডি যেন পায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে বলেন তিনি। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, এনআইডি দেওয়াও ভীষণ রকমের কঠিন কাজ। প্রবাসী অনেকেই দেশে এসে এনআইডি করেছে; কিন্তু যাদের নেই তাদের মধ্যে এমআরপিধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আরও আলোচনার তাগিদ দেন তিনি।

সর্বশেষ খবর