শিরোনাম
বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের জয়জয়কার

রাজশাহী শিক্ষক সমিতি নির্বাচন

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের ওপর শিক্ষকদের যে ক্ষোভ তা ব্যালটে জবাব দিয়েছেন। সোমবারের নির্বাচনে শিক্ষক সমিতিসহ সব ক্যাটাগরিতে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে পারেননি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ (হলুদ প্যানেল)। দীর্ঘদিন পর দাপট দেখিয়েছে জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক গ্রুপ (সাদা প্যানেল)। এই পরাজয়ের পেছনে প্রার্থী মনোনয়ন, উপাচার্যের একগুঁয়েমিকে দায়ী করেছেন সিনিয়র শিক্ষকরা।

শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা ১৯টি ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ১৪টি পদে বিজয়ী হয়েছেন। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ ৫ পদে বিজয়ী হয়েছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সাদা প্যানেল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সর্বোচ্চ নির্বাহী কমিটিতে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের (হলুদ প্যানেল) সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও কোনো কোনো পদে একেবারে ভরাডুবি হয়েছে। প্রতিটি প্যানেলে দাপট দেখিয়েছে জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক গ্রুপ (সাদা প্যানেল)। সোমবার সকাল নয়টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে ভোটগ্রহণ শেষে রাত ১১টার দিকে এ ফল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে সিন্ডিকেটের দুটি, পাঁচটি ডিন, ফাইন্যান্স কমিটি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি, শিক্ষক সমিতির যুগ্মসম্পাদক ও সদস্যপদ ৮টি, শিক্ষা পরিষদের ছয়টিসহ মোট ২৪টি পদে জয়ী হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের হলুদ প্যানেলের শিক্ষকরা। এই ছয়টি ক্যাটাগরিতে মোট ৩৭টি পদের বিপরীতে ২৪টি পদে জয় পেয়েছেন তারা। ডিন নির্বাচনে আইন অনুষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে হলুদ প্যানেল।

জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক গ্রুপ (সাদা দল) তিনটি সিন্ডিকেট, চারটি ডিন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সদস্যসহ মোট ১৩টি পদে জয়লাভ করেছে।

সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি পদের নির্বাচনে সরকারপন্থিদের ভরাডুবি একটু বেশিই। সরকারপন্থি হলুদ প্যানেল সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচনে ৩৩টি পদের মধ্যে মাত্র ১৪টি লাভ করে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতপন্থি সাদা প্যানেল লাভ করে ১৯টি পদ।

নির্বাচনের ফল নিয়ে সরকারপন্থি একাধিক সিনিয়র শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তারা বর্তমান উপাচার্য, দলীয় স্টিয়ারিং কমিটির অদূরদর্শিতা ও অনভিজ্ঞতাকে দায়ী করেন। রাজশাহী শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু বলেন, দল বড় হয়েছে। প্রশাসনের যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল। প্রার্থী মনোনয়নেও ভুল ছিল। এ ছাড়া ব্যক্তিগত ক্ষোভ কাজ করেছে। যার ফলে এই পরাজয়।

তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুনে যে ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন তার কারণেই এই বিপর্যয় ঘটেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতিতে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্য, বাংলাদেশের আর কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই রকম নীতিমালা নেই। তিনি শিক্ষক নিয়োগের সর্বনিকৃষ্ট নীতিমালা করেছেন। তার মেয়েজামাইকে নিয়োগ দিতে এবং বিভিন্নভাবে দুর্নীতি করতেই তিনি এটা করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট কারও কারও অভিযোগ।

অভিযোগ, উপাচার্য প্রথম মেয়াদে দায়িত্বে থাকাকালীন ব্যাপক অনিয়ম করেছেন, যা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তিনি দ্বিতীয়বার নিয়োগ পাওয়ায় সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ছিল। অনেকের ধারণা ছিল, এবার অন্তত তিনি কোনো অনিয়মে জড়াবেন না। অধ্যাদেশ অনুযায়ী তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন। কিন্তু তিনি তার পূর্বের রূপেই ফিরে গেছেন। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন।

আর নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন সঠিক ছিল না। স্টিয়ারিং কমিটিতে যারা আছেন তারা এটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি। মনোনয়ন যথাযথ না হওয়া, ব্যক্তিগত পছন্দের প্রার্থীকে নিয়ে আসা, আঞ্চলিকীকরণ করার চেষ্টা, স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যদের পদ দখলের চেষ্টাই এই পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছেন সরকারপন্থি একাধিক শিক্ষক।

তারা আরও যোগ করেন, বার বার বলা হয়েছিল, সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলে ডিন মনোনয়ন দেওয়া হোক। কিন্তু তা করা হয়নি। শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের প্রতিবাদ হিসেবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। নিয়োগ বাণিজ্য যে বিষয়গুলো বিভিন্ন সময় হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষকরা এ বিষয়টাকে পছন্দ করেননি। যার ফলে শিক্ষকরা, বিশেষ করে দলীয় শিক্ষকরাই বিষয়টা ভালোভাবে নেননি। তাদের প্রতিবাদ হিসেবে আজকের এই পরাজয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর